কথায় আছে না।
অভাগা যে দিকে যায়
নদীর পানি না কি সেই দিকেই শুকিয়ে যায়।
আজ যেন শুভর বেলায় কথাটা এক দম হুবাহু মিলে যাচ্ছে।
শুভ,নামটা যেমন।
আসলে
শুভর জীবনটা এতোটা শুভ বার্তা নিয়ে আসে নি এই নিষ্ঠুর পৃথিবীতে।
কে যে জন্ম কালে এই শুভ নামটা রাখছে শুভর!
এই কথা মনে মনে ভাবছে আর বির বির করে কি যেন বলছে শুভ।
রক্তিম সূর্যের লাল আভা উত্তরের আকাশ ছেয়ে গেছে।
নীড়ে উড়ে চলছে ক্লান্ত পাখিরাও
দেখতে দেখতে এক সময় মেঘের আঁড়ালে হারিয়ে গেল সূর্যের রক্তিম কিরণ।
তবে শুভর বুকে তখনো দাউ দাউ করে জ্বলছে পাওয়া না পাওয়ার যন্ত্রণার আগুন।
জীবনের হিসাব মিলাতে যেয়ে বার বার চোখের কোণে অশ্রু বেয়ে পড়ছে শুভর।
নরাধম এই পৃথিবীটা আজ যেন শুভর কাছে বড্ড ঘৃণার পাত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে
কিছু তেই যেন বাঁচতে ইচ্ছে করছে না শুভর কাছে।
জীবনের চব্বিশ বসন্ত পাড়ি দিয়েও
আজ পর্যন্ত কোন কাজে সফলতার মুখ দেখল না শুভ।
কি যেন এক অসুখে পরে
শুভর জন্মের এক বছরের মাথায় মারা গেল শুভর বাবা।
এর পর থেকে যেন এক রকম যুদ্ধ শুরু হয়ে গেল শুভর জীবন জুড়ে,
অভাবের সংসার।
অন্যের বাড়িতে কাজ করে দু’বেলা দু’মুঠো ভাত খেয়ে কোন রকমে জীবন চলে যেত শুভ ও তার মায়ের।
ছোট থেকে বাস্তবতা কি জিনিস তা একদম হাড়ে হাড়ে বুঝতে পারছে শুভ।
অনেক কষ্ট করে শত অভাবের মাঝেও খেয়ে না খেয়ে,
অন্যর জমিতে কৃষি কাজ করে
শত প্রতিকূলতাকে পাড়ি দিয়েও শুভ পড়া লেখা চালিয়ে গেছে।
শুভর মা ও শুভ স্বপ্ন দেখত একদিন শুভ অনেক বড় হবে,
পড়া লেখা শিখে অনেক বড় মানুষ হবে।
শুভরও ইচ্ছে ছিলো সে এক দিন পড়া লেখা শিখে শিক্ষক হবে,
পাশে দাঁড়াবে অবহেলিত কোমল মতি ঝরে পরা শিশুদের পাশে।
তবে আজ শুভর সেই স্বপ্ন যেন শুধু স্বপ্নই থেকে গেল।
কারন অনার্স পাশ করেও আজ অবধি কোথাও চাকরি হলো না শুভর।
আর চাকরি না হওয়ার পিছনে কারন একটাই আর তা হলো
ভুরি-ভুরি টাকা ও উপর মহলে তদবির করার মতো কোন লোক নেই শুভর পিছনে।
এইতো কিছুদিন আগেও এক স্কুলে চাকরির আবেদন করছিলো শুভ।
উত্তরে ওই স্কুলের সভাপতি বলছেন বারো লক্ষ টাকা ঘুষ দিয়ে তবেই চাকরি মিলবে শুভর কপালে।
সভাপতি সাহেবের কথা শুনে সেদিন শুভ অসহায় এর মতো ঠোঁটের কোনে এক চিলতে শুকনো হাসি এনে বলছিলো
আমি’তো দূরের কথা,
আমার বাপ,দাদারাও এক সাথে এতো টাকা চোখে দেখছে কি না সন্দেহ আছে!
দেখতে দেখতে এক সময় অন্ধকার নেমে এলো লোকালয় জুড়ে।
দূরের কোথাও থেকে উড়ে চলছে আকাশ পানে দাঁড় কাকের দল।
শুভর হাতের ফোনটা আবার বেজে উঠলো স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখে
তানিয়ার নাম্বার ভেসে উঠছে।
ওহ্ তানিয়ার কথা’তো বলা হয়নি।
তানিয়া শুভর পাশের গ্রামের মেয়ে
শুভর ভালোবাসার মানুষ!
তানিয়া এবার ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে,
এইতো সামনের মাসেই তার ফাইনাল পরীক্ষা।
শুভ কে বার বার বলার পরেও কোন কাজ হচ্ছে না।
পরীক্ষার পরেই তার বাবা-মা তাকে বিয়ে দিয়ে দিবে।
অনেক ভালো ভালো সম্বধ আসচ্ছে তার জন্য,আর কত জনকে এই ভাবে ফিরিয়ে দিবে!
নানা রকম মিথ্যে অযুহাত দিয়ে।
শুভর ফোন বেজেই চলছে,
রিসিভ করার ইচ্ছে না থাকলেও,ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়ে ফোন ধরলো শুভ,
রিসিভ করার সাথে সাথেই ফোনের ওপাশ থেকে তানিয়া গদ-গদ করতে করতে বললো এই যে মিস্টার শুভ শুনেন,চাকরি কি পাইছেন?
তানিয়ার কথার কোন জবাব দেয়না শুভ।
শুধু মনে মনে বলে চাকরি কি আর আমার বাপের ঘরের যে আবদার করলে পাব।
তানিয়া কি সব বলতে বলতে শেষে শুভকে বললো সামনের মাসে পরীক্ষা শেষে আমার বিয়ে,এর মাঝে যদি তুমি পারো একটা চাকরি জোগার করিও নয়তো তোমাকে আর আমার অপেক্ষায় থাকতে হবে না।
বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে ফোনটা কেটে দিলো শুভ।
আকাশে তখন অনেক রাত
তারা গুলো জ্বলছে আপন মনে।
শূন্য দৃষ্টি নিয়ে সে দিকটায় কিছুক্ষণ চেয়ে রইলো শুভ।
এর পর উঠে দাঁড়াল শুভ,
গাঁয়ের ব্যস্ততম পিচ ঢালা ঐ বড় রাস্তার পাশ ধরে এগিয়ে চলছে শুভ।
চব্বিশ বসন্তের পাওয়া না পাওয়ার হিসাব মিলাতে যেয়ে
অন্য জগতে নিজেকে বিলিন করে শুভ।
নাবিল পরিবাহনের বাস হুইসেল দিয়ে এগিয়ে চলছে সাঁই সাঁই শব্দে,নাহ্ সেদিকে কোন নজর নেই শুভর,
হঠাৎ বিকট শব্দে শুভর দেহ আছড়ে পড়ে পিচ ঢালা কালো রাস্তার উপর,
লাল লাল তাজা রক্তের স্রোত বয়ে যায় রাস্তা জুড়ে।
কালো পিচ ঢালা রাস্তাকে রাঙিয়ে তুলে শুভর তাজা রক্ত।
লোকের ভীড় জমে যায়,
সকল পাওয়া না পাওয়ার পাঠ চুকিয়ে শুভ শান্তি খুঁজে ফিরে
স্রষ্টার স্বর্গে।
আর আমাদের সমাজপতিরা কর্তা বাবুরা আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হতে ব্যস্ত তখনো।
আপনার মন্তব্য লিখুন