অণুগল্প

শরীরটা এখন আর ভালো যায় না | নাজমুল হাসান সাগর

শরীরটা এখন আর ভালো যায় না,শরীরে জেকে বসেছে বাহারি রোগের পশরা।সরকারী হাসপাতালের ডাক্তারের দেওয়া ওষুধের তালিকা বয়সের সাথে পাল্লা দিয়ে দীর্ঘ হচ্ছে দিনকে দিন।একটা সময় ছিলো অভাব আর কাজের তারনায় দিনে দুই বেলা ভাতও খেতে পারতাম না নিয়মিত।মেস লাইফের অনিয়ন্ত্রিত জীবন যাপনের কুফলগুলো হয়তো এই বয়সে এসে প্রতিশোধ নিচ্ছে ইচ্ছেমত। এখন আর রোদে হাটতে পারি না,চশমা ছাড়া দিন আর রাতের পার্থক্যটাও করতে পারি না।শরীরটা থর থর করে কাপে অনবরত কখনো মৃদু আবার কখনো ভারী ভুমিকম্পের মতো।

ছোট বেলায় দেখেছি দাদুর বয়সী মানুষগুলোকে এভাবে কাঁপতে, খুব ভয় পেতাম এমন কাপুনি দেখে তাই দূরে দূরে থাকতাম। তখন বুঝিনি এটা বয়সের ভার তাই এভাবে কাপুনি হয়।উত্তরাধিকার সুত্রে এই কাপুনি আর বয়সের ভার আমিও পেয়েছি।এই বয়সের অন্যতম প্রধান অবলম্বন লাঠি । সবাই লাঠি হাতেই ভর দিয়ে চলা ফেরা করে । আমার মতো বুড়রা একটা লাঠিতে ভর করেই পরন্ত বিকেলে ঝাঁজহীন রোদে অথবা সকালের প্রাত ভ্রমনে বের হয় প্রতিদিন। সাথে আমিও।অন্যান্যরা একাই আসে।কিন্তু আমি একা আসি না, আমার হাতে লাঠিও থাকে না।

আমার হাতে একটা হাত থাকে।বয়সের বৈরী আচরনে সে হাতও তার জৌলুশতা হারিয়েছে,কুঁচকে গেছে হাতের চামড়া।কাপুনিও কম নেই সে হাতে তবে উত্তেজনার নয় আমার মতই বয়সের ভারে কাপে সেই হাত।যে হাত বিগত সাতচল্লিশ বছর পরম নির্ভরতায় আমাকে সাহস দিয়ে এসেছে ভরসা দিয়ে এসেছে আর দিয়ে এসেছে ভালোবাসা।

আমরা সময় হারিয়েছি,যৌবন হারিয়েছি, বিয়ের আগে পালিয়ে প্রেম আর ডেটিং দেবার মজা হারিয়েছি, দেহটাও আর আগের মতো কথা শোনে না ।কেমন জানি কাঁচের ঘরের মতো হয়ে গেছে। ঠুনকো আঘাতেই ভেঙ্গে চুরে নিঃশেষ হয়ে যাবে সব।তবুও আমার চলতে লাঠি লাগে না তোমার ঐ কুঁকড়ে যাওয়া চামড়ার বয়স্ক হাতই আমাকে নির্ভয়ে রাস্তা চলতে প্রেরনা দেয়।যেমন চলতাম পালিয়ে প্রেম করা অবস্থায় কোন পার্কের ছোট রাস্তা ধরে,বিয়ের পরে জীবন পথের নানা বন্ধুর ও মসৃণ পথ ধরে।আর এখন চলি কবরে যাওয়ার পথে।সময় আমাদের রাস্তা বদলে দিয়েছে তোঁ কি হয়েছে আমাদের ভালোবাসার পথ তো একটাই হৃদয়পুরের মুক্তাঞ্চল।

আজ আমাদের ৪৭তম প্রেম বার্ষিকী।প্রথম প্রেম আর সাক্ষাতের দিন আমরা হাত ধরে হাঁটতে পারি নাই কিন্তু এর পরে কোন দিন হাত ছেড়ে হাটতে হয় নাই আমাদের।আজও তার ব্যাতিক্রম হচ্ছে না।বয়স বেড়েছে এখন আর শরীরে প্রসাধনী মাখা হয় না তোমার।কিন্তু ৩০ বছর আগে কক্সবাজার থেকে এনে দেওয়া পাথরের ব্রেসলেটটা আজও তুমি পরে এসেছ আমাদের ৪৭তম প্রেম দিবসে।ভালবাসাগুলো এমনই, বেশি কিছু লাগে না। সামান্য একটা পাথরের ব্রেসলেট ৩০ বছর পরে অমুল্য হয়ে যায় শুধু ভালোবাসার কারনেই।জীবনের সায়াহ্নে এসে আমরা হয়তো কিছুই পাইনি বলে মনে করতে পারে অনেকেই কিন্তু আমি তোমার ভালোবাসা পেয়েছি। এক জীবনে এর থেকে বেশি আর কি লাগে বল নাইসের আম্মু ?

অনেক বছর পরে বা আগে ।
মঙ্গলবার, ১২ এপ্রিল ২০১৬, ২৯ চৈত্র ১৪২২।
ঢাকা,সংকরের ভারা বাসা।
বিকেল ৩ টা ।