রঙের জীবন

রাকিবের নানা বাড়ি || রুহুল আমিন রাকিব

মা,আর কত দূর নানা বাড়ি?
রাকিবের কথা শুনে মাথা ঝাকায় রাকিবের মা।
এর পর বলে এইতো বাবা আর একটু দূরে তোমার নানা বাড়ি।
ওই যে দূরে বাতির নিভু নিভু আলো দেখা যাচ্ছে তার একটু দূরে তোমার নানা বাড়ি।
রাতের অন্ধকারে মাঠ-ঘাট, বন পেড়িয়ে ছুটে চলছে রাকিব আর তার মা।
যদিও রাকিবের পরিবারে তার আরো দুই ভাই,আর বাবাও ছিলো,তবে তিন দিন আগে,৯’মে
রাতের আধাঁরে রাকিবের বাবা আর রাকিবের বড় দুই ভাইকে পাকিস্তানের মেলেটারিরা বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে হাত পা বেঁধে ওদের সামনেই বুকে বন্দুক ঠেকিয়ে গুলি করে বুক ঝাঝরা করে দেয়।
আর রাকিবের মাকেও ধর্ষন করতে বাদ রাখে নাই সেদিন রাতে
মানুষ রূপি ওই পাকিস্তানের হায়েনারা।
এর পর রাকিবের ভাই,আর বাবার লাশও কবর দিতে পারে নাই রাকিব আর তার মা।
রাকিব সেদিন রাতে দেখেছিলো কিছু বাঙালি দালাল রাজাকার, আলবদর,রাকিবের বাবা,আর ভাইয়ের লাশের উপরে চড়ে উল্লাস করতে।
নিজের জীবন আর ছেলের জীবন বাঁচাতে রাতের আধাঁরে
পালিয়ে নিজের বাবার বাড়িতে রওয়ানা করছে রাকিবের মা।
রাকিব তখন অনেক ছোট,দিনে জঙ্গল,পাহাড়ের গুহায় পালিয়ে থেকে খেয়ে না খেয়ে রাত হলে ছুটে চলছে নানার বাড়ির উদ্দিশ্যে।
এর পর কেটে গেল আরো বহু দিন অনেকটা মাস।
বাংলার আকাশে বাতাসে সব সময় শুধু ভেসে বেড়ায়,বারুদের গন্ধ আর আত্মিও স্বজন হারানোদের বুক ফাঁটা কাঁন্নার আর্তনাদ।
দেখার যেন কেউ নেই।
মৃত্যু হাতের মুঠোয় নিয়ে দিনের পর দিন রাতের পর রাত সবাই এগিয়ে চলছে একটি সুন্দর ভোরের জন্য।
এভাবেই চললো আরো কয়েক দিন
এর পর একদিন রাতে সবাই ঘুমাতে গেল বাংলার আকাশে জোস্নার আলোকিত ময় রজনী নিয়ে।
সেদিন মাঝ রাতে গলা ছেড়ে কিচির মিচির সব্দ করে মিষ্টি কণ্ঠে গান ধরে ছিলো পাখিরা।
শিশির শিক্ত গাছের পাতা গুলো মাথা নুয়ে শুভেচ্ছা জানিয়ে যেন বলছিলো স্বাগতম হে নতুন সূর্য।
রাকিব আর রাকিব এর মাও সেদিন রাতে,পরম শান্তি ময় একটা ঘুম দিয়ে ছিলো।
হঠাৎ মানুষের চিৎকার আর উল্লাস শুনে সকালের ঘুম ভাঙে রাকিব আর রাকিবের মায়ের।
সূর্য তখন তার রক্তিম আভাকে আরো আলোকিতো ময় করে ছড়িয়ে পড়ছে পূর্ব আকাশে।
শিউলি ফুলগুলো রোদের আলোয় ঝরে পরে যেন শুভেচ্ছা জানাচ্ছে সকালের সোনালী আলোকে।
দেখতে দেখতে বাংলার আকাশে বাতাসে আর টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত ,ছেলে বুড়ো,মা,বোনের,উল্লা­সে ভরে গেল বাংলার রাজপথ।
রাকিব আর রাকিবের মাও যোগ দিলো সেই দলে।
কে যেনো উড়িয়ে দিলো মিছিলের মাঝ পথে,লাখো মা বোন আর ভাইয়ের রক্তে কেনা লাল সবুজের পতাকা।
বিশ্ব মিডিয়া জেনে গেল জন্ম হলো একটি নতুন দেশ,একটি নতুন জাতি।
রাকিবের মায়ের মতো,লাখো,ছেলে হারা স্বামী হারা,ভাই হারা বাঙালি জাতি পেল একটি নতুন দেশ নতুন সূর্য আর নতুন পাখি ডাকা ভোরের আলো,
দেখতে দেখতে সেদিনের সেই ছোট্ট রাকিব আস্তে আস্তে অনেক বড় হলো।
স্কুলে ভর্তি হলো আর এর পর জানতে পারলো সেদিনের সেই মুক্তিকামি দিনটি ছিলো বাঙালি জাতির বিজয়ের দিন।
স্বাধীন বাংলার গর্বিত দিন মহান বিজয়ের দিন ষোলো’ই ডিসেম্বর।