অণুগল্প

বিবাহিত জীবন | রেজাউল সরকার রনি

◈ আজ শুক্রবার তাই একটু বেশিই ঘুমাচ্ছি । সারা সপ্তাহ এত ব্যস্ত থাকি যে ভাল মত ঘুমাতেও পারিনা । মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকরী করি । আগামীকাল বেতন পেয়েছি ,তাই মনটাও খুব খুশি । আজ পরীকে নিয়ে শপিং করতে যাব এমনটি কথা ছিল রাতে । রাতে পরীর সাথে গল্প করতে করতে কখন যে ঘুমায় পড়ছি বুজতেই পারিনি । সকালের সোনালী আলো পড়ছে চোখে তবুও বিছানায় শুয়ে আছি ঘুম ভাঙ্গছেনা । সকালে পরী ডাকছে……..

• -এই শুনছো ।
• -হিমম….
• -এই ইবান, ওঠ না সকাল হয়ে গেছে ।
• -হিমমমম…..
• -আরে ওঠনা সকাল হয়ে গেছে তো ।
(চোখ খুললাম । ঘুমের রেশ কাটেনি দেখি পরী দাড়িয়ে আছে। এমন করে দাড়িয়ে আছে যেন মনে হচ্ছে আমার ম্যাডাম দাড়িয়ে আছে ।)
• -হিমম.. কী… বল.?
• -ওঠ ।
• -আরে বাবা ওঠছি তো।
• -আজ না আমাদের শপিং এ যাওয়ার কথা ।
• -যাব তো । এত টেনশন নিচ্ছ কেন?
• -তুমি ওঠ না , তোমার প্রিয় খাবার তৈরী করছি ।
• -(বিরানির গন্ধ আসছে নাকে, তাই বুজতে পারছি যে আজ বিরানী রান্না হয়ইছে । ) তুমি বিরানি রান্না করছ ।
• -হিমম একটু আগে, সাথে মুরগীর মাংস রান্না করছি ।
• -ওঠে পড়লাম আর দেরী করার তো কোন মানেই হয় না ।

◈ হঠাৎ এক বড় ভাইয়ের ফোন আসল ।
• -হ্যালো আসসালামুআলাইকুম প্রিন্স ভাই ।
• -ওয়ালাইকুমসালাম, ইবান কোথায় তুমি ?
• -আমিতো বাসায় ।
• -একটু তাড়াতাড়ি আমাদের বাসার সামনে আসোতো ।
• -কেন?
• -আরে আসইনা?
• -বলবেনতো?
• -আগে আস্ তারপর বলছি ।

◈ আমি তাড়াতাড়ি তৈরী হয়ে পরীকে বলে বেড়িয়ে গেলাম আর তাকে রেডি হয়ে থকতে বললাম । সেই বড় ভাইয়ের সাথে দেখা হতেই জোড় তার জন্য মেয়ে দেখতে নিয়ে গেল । আমার অনিচ্ছা সত্ত্বেও যেতে হল । বুজতে পারছি অনেক দেরী হয়ে গেছে । এর মধ্যই পরী অনেক বার ফোন দেওয়া শুরু করে দিয়েছে । তাই আমি পরীকে ফোন করে বললাম আমার একটা কাজ আছে তুমি শপিং চলে যেতে যাও । পরীও আমার কথা মত চলে গেল । মেয়ে দেখে আসতেই অনেক দিনের এক পুরোনো বান্ধবীর (নিলা) সাথে দেখা । যেহেতু অনেকদিন পর দেখা তাই একটা রেস্টুরেন্টস এ ঢুকলাম । পাশেই একটি শপিং আছে সেটা আমার জানা ছিলনা । ওর বিয়ে হয়েছে আর ওর স্বামীর সাথে বাসায় গিয়ে আলাপ করায় দিবে ফোনে । বান্ধবীকে বিদায় দিয়ে বাসায় আসছি । পরীকে ফোন করছি কিন্তু ফোন কেউ তুলছে না । ৭-৮ বার ফোন দিলাম কিন্তু কেউ তুলছে । কিছুক্ষণ পর ফোন বন্ধ বলছে । চিন্তা ক্রমশ বাড়ছে । এদিকে রাস্তায় আটকে আছি । যাহোক তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরলাম । এত ডাকছি দরজা কেউ খুলছেনা পিছন দরজা দিয়ে ঢুকতেই দেখি পরী ফোন পড়ে আছে ফের ভাঙ্গা । পরীকে ডাকছি কিন্তু কোন সাড়া পাচ্ছিনা । চিন্তায় পড়ে গেলাম । দৌড়ে গেলাম রুমে দেখি সব ওলট-পালট । দেখি পরী ঘরের এক কোণে কাদছে । অনেক কেদেছে বুজতে পারছি দুপুরে কিছু খায়নি । পরী কাছে যেতেই…
• -তুমি বাসায় আসছ কেন?
• -বাসায় আসব নাতো কোথায় যাব ?
• -তোমার তো যাওয়ার মত অনেক মানুষ আছে ।
• -কি বলছ কিছু বুঝছি নাতো?
• – এখনতো বুজতেই পারবেনা ।
• -পরী কি বলছ সত্যিই আমি কিছু বুজতে পারছিনা ।
• -এখনতো বুজবা না । নতুন কাউকে পাইছ তাই আমার কথা তো এখন বুজবাইনা ।
• -কি আবলতাবল বলছ ।
• -আমাকে নিয়ে তোমার শপিংএ যাবার সময় হয়না আর অন্য কাউক নিয়ে ঘুরে বেড়াও । সারাদিন কই ছিলে তুমি ?
• -আমি কাকে নিয়ে ঘুরি ? আর একটা কাজে ছিলাম ।
• -আমি জানিতো তোমার কাজ কী । মেয়ে নিয়ে সারাদিন ঘুরা তারপর রেস্টুরেন্টএ খাওয়া ।
• -(ইবান বুজতে পারছে যে পরী নিলার কথা বলছে ।) আরে ওতো আমার বান্ধবী নিলা ছিল । আর সারাদিন প্রিন্স ভাইয়ের মেয়ে দেখতে চলে গেছে
• -( কিন্তু পরী কিছুতেই বুজছেনা ।) এখন কত বান্ধবী বের হবে । থাক থাক আর বুজাতে হবে । তুমি যাও ফ্রেশ হও ।
• -(আমি আর পরীকে কিছু বললাম না ) হিমম ।
• – (পরী হাসছে । কেন হাসছে বুজতে পারছিনা) তুমি নাকি প্রিন্স ভাইয়ের জন্য মেয়ে দেখতে গেয়েছিলে । ওনি ফোন দিছিল তার মেয়ে পছন্দ হয়েছে আর তোমার বান্ধবী ফোন দিছিল তার স্বামীর কথা বলাই দিতে ।
• -………( আমি কিছু বলছিনা চুপ করে আছি ।)
• -পরী এসে জড়িয়ে ধরে আর বলে তুমি আসলেই অনেক ভাল । আমি শুধু শুধু তোমাকে ভুল বুঝি ।

◈ এভাবেই চলতে থাকে তাদের জীবন । মাঝে মাঝে ভুল বুঝাবুঝি আবার ঠিক হয়ে যায় ।