জীবনের গল্প রঙের জীবন

বাদামওয়ালা-৬

স্বপ্ন দেখি, স্বপ্ন দেখাই, স্বপ্ন বুনে যাই রোজ
এক পা আগাই দু’পা পিছে, পাইনা পথের খোঁজ।

::
অনভিজ্ঞ, অভিজ্ঞাতার ভাণ্ডার টা যেহেতু শূন্য সেহেতু শিখতে হবে। এ যে মানবজন্ম পশুজন্ম নয়। কালের পরিক্রমায় সবাই হাটতে শিখে, কাঁদতে শিখে, হাসতে শিখে, বেঁচে থাকার তাগিদে সব কিছুই শিখতে হয় তাই শিখে। কত রকমের শিক্ষা? কেউ শিখে শখ করে, কেউবা শিখে ভাগ্যের পালাবদলে নিজেকে অন্য রাজ্যের হুতভূক হিসাবে। এ শেখার শেষ কোথায়? নিজেকে নিজে ভাঙ্গি রোজ, গড়ার সময় কই? প্রতিনিয়ত তলিয়ে যাই কষ্টের সাগরে, অতল গহ্বরে হারিয়ে যায় আমার স্বপ্ন সব। হাতড়িয়ে খুঁজে ফিরি, ডুব দিয়ে নিয়ে আসি হরেক রকম স্বপ্ন।
::
না কিছুতেই পারছিনা, অগ্যতা স্ট্যান্ডের এক কোণায় বাদাম নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। একটি মাঝবয়সী লোক এসে বলল-
-ভাই বাদাম কত?
-প্রতি প্যাকেট ১০ টাকা।
-কবে কার ভাঁজা,বাসি নয়তো?
-না দাদা,আজ ভোরের একদম টাটকা।
-বিশ্বাস হয়না ভাই।
-সত্যি বলছি দাদা এটা আজ ভোর রাতের।
-এরকম সবাই বলে, ইত্যাদি… ইত্যাদি…

এক প্যাকেট নিয়ে চলে গেল, আমি লোকটির চলে যাওয়া দেখতে লাগলাম। এক পা দুই পা করে এগিয়ে যাচ্ছে সামনের দিকে পিছনে ঠেলে দিচ্ছে আমাকে, আমার আর তার
দূরত্ব বাড়ছে শুধু কি এখানেই দূরত্ব বাড়ছে তা কিন্তু নয়?

দূরত্ব বাড়ছে বিভিন্ন জায়গায় মানুষের ধ্যানধারণায়, চিন্তা চেতনায়, দর্শনে, বাস্তবিকতায় আর মনুষ্যত্বে। এতো এতো দূরত্বের মাঝেও বিশ্বাস আর অবিশ্বাস থাকে, দুর্নিবার ঘৃণা থাকে যার বিপরীতে হয়তবা থাকে কিঞ্চিৎ মানবিকতা, এক চিমটে প্রেম আর ভালবাসার স্বল্পতা। তবুও তো ছুটে চলি রোজ নতুন নতুন স্বপ্ন বুকে নিয়ে এঁকে দেই আমি উকিলের পদচিহ্ন এ নতুন ধরায়।
::
১২ টার দিকে বাসায় ফিরে এলাম, টাকা আর অভিজ্ঞতার থলেটা বেশ ভারী মোটে ৬ প্যাকেট বিক্রি করতে পেরেছি। এই কয়েক টাকাই যেন কত টাকা? এর ওজন যে অনেক কত কষ্ট? কত বিশ্বাস অবিশ্বাসের সাথে পাল্লা দিয়ে অন্যের পকেটের টাকা যে নিজের পকেটে ঢুকাতে হয় এ তল্লাটের বাস্তব অভিজ্ঞতা ছাড়া ঠাওর করা যায়না। ফারুক আর সাইফুল আমাকে দেখে হাসছে, হাসবেই না কেন? হঠাৎ হাসি থামিয়ে ফারুক বলতে লাগলো –
-দোস্ত,জীবন কাকে বলে বলতে পারিস?
আমাকে উত্তর দেয়ার কোন রকম চাঞ্জ না দিয়ে সে নিজেই উত্তর দিল”এরই নাম জীবন”
ক্ষণিকের জন্য আমি হারিয়ে গিয়েছিলাম অন্য রাজ্যে, হ্যাঁ এরই নাম জীবন যেখানে যেমন সেখানে তেমন করেই নিতে হয় চলমান এ কঠিন প্রক্রিয়াকে খুব সহজ