রঙের জীবন

বাংলা সিনেমার অসাধারণ জুটি

মুহায়মীন লতিফ:

মাত্রই ইন্ডাস্ট্রিতে জমে উঠেছে সালমান শাহ-মৌসুমী জুটির রসায়ন। কেয়ামত থেকে কেয়ামত ছবির নাম শুনলেই তরুণেরা মাতোয়ারা। তরুণদের কাছে স্টাইল আইকন হয়ে উঠেন সালমান শাহ। কিন্তু এই জুটি আরেকটি সিনেমা করার পর গোল বাধে। একসঙ্গে জুটি বেঁধে আর কাজ করতে চাননি তাঁরা। শুরু হয় নতুন নায়িক খোঁজার পালা।
পরিচালক জহিরুল হক তখন দারুণ এক সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন। যদিও এতে ক্ষতিরও সম্ভাবনা হওয়ার যথেষ্ট আশঙ্কা ছিল। তবু তিনি চেষ্টা করে দেখলেন। কিন্তু এটাই যে, বাংলাদেশের বিখ্যাত জুটি হয়ে রবে তা কেউ হয়তো তখনো ভাবতে পারেনি।
পরিচালক এহতেশাম কাজী শারমিন নাহিদ নুপুর নামে একটি মেয়েক নিয়ে আসেন চলচ্চিত্রে। এহতেশামের ছবিতে খুব একটা ভালো করতে পারেনি মেয়েটি। সেই নবীন মেয়েটিকে দিয়েই বাজি ধরেন জহির। মৌসুমীর জায়গায় তাঁকে নিয়ে জুটি বাঁধেন সালমানের সঙ্গে। সিনেমার নাম তুমি আমার। সময়টা ১৯৯৪। মুক্তি পাওয়ার পর সিনেমা হিট। আর তাঁরা দুজন পরিচিত হন বাংলা চলচ্চিত্রের অসামান্য জুটি সালমান শাহ-শাবনূর নামে। রূপালি পর্দায় এসে কাজী শারমিন নাহিদ হয়ে যান শাবনূর। এই নামটি দেন তারই চলচ্চিত্রের মেন্টর পরিচালক এহতেশাম।
এরপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি এই জুটিকে। একের পর এক জনপ্রিয় ও বক্স অফিস সফল ছবি উপহার দিয়ে গেছেন। সালমান শাহ এর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এই জুটিই ছিল বাংলা চলচ্চিত্রের অধরা জুটি। সালমান শাহ ও শাবনূর জুটি ১৪ টি জনপ্রিয় সিনেমা উপহার দেন। এ বছর এই জুটি পার করেছে ২৫ বছর। এখনো তাঁরা বাংলা চলচ্চিত্রপ্রেমীদের মনে আছেন সোনার হরফে আঁকা। চলুন জেনে আসা যাক এই জুটির পথযাত্রা।

তুমি আমার
পরিচালক: জহিরুল হক
সাল: ১৯৯৪
ছবিটিতে অসাধারণ কিছু গান ছিল। তার মধ্যে অন্যতম জ্বালাইয়া প্রেমের বাত্তি, আমার জন্ম তোমার জন্য ইত্যাদি।

সুজন সখী
পরিচালক: শাহ আলম কিরন
সাল: ১৯৯৪
১৯৭৫ সালে খান আতাউর রহমান ফারুক ও কবরীকে দিয়ে জনপ্রিয় একটি সিনেমা করেন সুজন সখী নামে। এই ছবিটিই সালমান শাহ ও শাবনূরকে দিয়ে রিমেক করেন শাহ আলম কিরন। সিনেমাটির কাহিনি ও সংলাপ লিখেছেন আমজাদ হোসেন। ছবিটিতে অসাধারণ কিছু গান ছিল। গুণ গুণ গুণ গান গাহিয়া, সব পাখিরে পার করিতে গানগুলো উল্লেখযোগ্য।

বিক্ষোভ
পরিচালক: মোহম্মদ হান্নান
সাল: ১৯৯৪
ছবিটিতে অসাধারণ কিছু গানের ব্যবহার ছিল। বিদ্যালয় মোদের বিদ্যালয়, একাত্তরের মা জননী ইত্যাদি।

স্বপ্নের ঠিকানা
পরিচালক: এম এ খালেক
সাল: ১৯৯৫
সিনেমাটি বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আয়কারী সিনেমা।

মহা মিলন
পরিচালক: দিলীপ সোম
সাল: ১৯৯৫

বিচার হবে
পরিচালক: শাহ আলম কিরন
সাল: ১৯৯৬

তোমাকে চাই
পরিচালক: মতিন রহমান
সাল: ১৯৯৬
ছবির কয়েকটি গান বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল। তুমি আমায় করতে সুখী জীবনে, ভালো আছি ভালো থেক, বাজারে যাচাই করে ইত্যাদি।

স্বপ্নের পৃথিবী
পরিচালক: বাদল খন্দকার
সাল: ১৯৯৬
ছবির অসামান্য দুটি গান বৃষ্টিরে বৃষ্টি ও তুমি আমার মনের মানুষ।

জীবন সংসার

পরিচালক: জাকির হোসেন রাজু
সাল: ১৯৯৬
উল্লেখযোগ্য গান পৃথিবীতে সুখ বলে, কী আছে জীবনে আমার।

চাওয়া থেকে পাওয়া

পরিচালক: রেজা হাসমত
সাল: ১৯৯৬

প্রেম পিয়াসী
পরিচালক: রেজা হাসমত
সাল: ১৯৯৭

স্বপ্নের নায়ক
পরিচালক: নাসির আহমেদ
সাল: ১৯৯৭

আনন্দ অশ্রু
পরিচালক: শিবলি সাদিক
সাল: ১৯৯৭
উল্লেখযোগ্য গান তুমি আমার এমনই একজন, তুমি মোর জীবনের ভাবনা ইত্যাদি।

বুকের ভেতর আগুন
পরিচালক: ছটকু আহমেদ
সাল: ১৯৯৭

মাত্র তিন বছর অভিনয় করেছেন দুজন। তিন বছরে দিয়েছেন ১৪টি জনপ্রিয় সিনেমা। কিন্তু তিন বছরে তৈরি হওয়া এই জুটি বাংলা চলচ্চিত্রপ্রেমীদের হৃদয়ে থাকবে আজীবন। যেমনটি পার করেছে ২৫ বছর।