বাবা মারা গিয়েছে এই খবর জানাতে মেয়েকে ফোন করে দেখি সে আমাদের নাম্বার ব্লক করে দিয়েছে। আমাদের অপরাধ অসুস্থ বাবা মেয়েকে একবারের জন্যে দেখতে চেয়েছিল সেটা তাকে কল করে জানিয়েছিলাম।
দেখতে আসলে যদি দায়িত্ব নিতে হয় এই ভয়ে হয়তো দেখতে আসেনি। এখন তো মারাই গিয়েছে আর দায়িত্ব নেয়ার ভয় পাবেনা এটা চিন্তা করে মৃত বাবার পরিচিত একজন কে কল করে তার ছেলে, দুই মেয়ে এবং স্ত্রী কে জানাতে বললাম।
বিশেষ করে তার একমাত্র ছেলে ইমনকে জানানোর কথা বলেছি কারন গতকাল মারা যাওয়ার আগে ইমনকে অনেক ডাকছিল।
প্রায় ৪৫ মিনিট পরে সেই পরিচিত জানালো তারা কেউ আসবে না। আমি তাকে আবার বল্লাম ভাই ওনাদেরকে আরেকবার কল দেন ওনাদের কোন খরচ বহন করতে হবেনা আমরাই সকল খরচ বহন করবো। তার পরিবারের কেউ না আসলে এই বৃদ্ধ বাবার লাশটি কোন পরিচয় ছাড়াই বেওয়ারিশ ভাবে দাফন করতে হবে।
রাত তখন প্রায় ২টা। আমরা মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে লাশ নিয়ে অপেক্ষা করছি রাত ৮ থেকে, অন্তত এই বৃদ্ধ বাবাকে যেন বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে দাফন করতে না হয়। এদিকে হাসপাতাল থেকে আমাদেরকে দ্রুত লাশ নিয়ে যাওয়ার কথা বলছে। আমরা যদি সেই মুহূর্তে লাশ গ্রহণ করতাম তখন তার ডেড সার্টিফিকেট তৈরি হতো বেওয়ারিশ হিসাবে, কারন আমরা তার আইনগত কোন অভিভাবক না।
আবার তার সেই পরিচিত লোক কে ফোন দিলে সে বলল তার পরিবারের কেউ আর ফোন ধরছে না।
আমরা যখন এই অবস্থায় কি করবো বুঝতে পারছিলাম না, ঠিক সেই মুহূর্তে একজন ফোন করে বলল সে মৃত ব্যক্তির ভাই এবং সে হাসপাতালে আসতেছেন। আমাদের মধ্যে কিছুটা আশার সঞ্চারণ হলো, এবং সে সর্বোপরি হাসপাতালে আসলেন। আমরা তার জাতীয় পরিচয়পত্র মিলিয়ে দেখলাম তারা আপন ভাই, তবে সে তার ভাইয়ের লাশ নিয়ে যেতে চাচ্ছেন না।
এরপরে আমরা তার ভাইকে সাথে নিয়ে আজ সকাল ১১ টার সময় আজিমপুর কবরস্থানে দাফন কাজ সম্পন্ন করি। আল্লাহর কাছে হাজার সুক্রিয়া শেষপর্যন্ত তাকে বেওয়ারিশ ভাবে না, তার নাম পরিচয় সহ-ই দাফন করতে পেরেছি।
তবে এই অমানবিক ঘটনার স্বাক্ষী হওয়ার পর থেকে আমাদের নিজেদের কে মানুষ বলে দাবি করতে লজ্জা হচ্ছে, কারন একটা পশুও যদি মারা যায় তখন অন্য পশুরা তাকে দেখতে আসে।
এই বৃদ্ধ বাবা করোনার আগে একটি দোকান করে তার সংসার চালাতো এরপরে সে অসুস্থ হওয়ার কারনে সংসারে আর কোন টাকা দিতে পারতোনা। টাকা না দিতে পারার কারনে তাকে আর তার পরিবারের কেউ দেখতে পারতোনা। এরপর থেকেই তার জীবন কাটাতে হয় রাস্তায় ঘুরে ঘুরে। এই বৃদ্ধ বাবা আমাদের ‘ভালো কাজের হোটেল’ এর কমলাপুর শাখায় প্রতিদিন খাবার খেতেন, আর থাকতেন কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে। অসুস্থতার জন্যে তার রাস্তাঘাটে থাকতে কষ্ট হওয়ার কারনে সে গত ৬ মাস যাবত আমাদের বৃদ্ধাশ্রম #আপন_ঘরে ছিলেন। তার মতন এরকমের আরও প্রায় ৩০ জন বৃদ্ধ মা-বাবা আছেন আমাদের এখানে তাদের ভাগ্যে কি অপেক্ষা করছে আল্লাহ জানেন।
আরিফুর রহমান শিহাব
আপনার মন্তব্য লিখুন