রঙের জীবন

তিতাস ভাঙ্গা বাড়ী || ইকরাম মাহমুদ

সময় টা ছিলো বর্ষাকাল,আকাশ আঁধার কালো হয়ে ছিলো অর্ধমাস,সূর্যকে দেখা যেত শেষ বিকালে কখনো দুপুরে,কে জানে আকাশের বুকে এত বেদনা লুকানো ছিলো,সময়ে অসময়ে কারণে অকারণে ঝিরঝির বৃষ্টি ঝরে দিনরাত্রি,
যেমন টা অসহ্য হয়ে রঙবেরঙ এর মানুষগুলো প্যাঁচার রূপধারণ মুখমন্ডল জোরে,রাগান্বিত হয়ে বসে সময় অতিবাহিত করতো,কূলহারা তরী যেমন মাঝ নদীতে থমকে যাই,ঠিক তেমন করে বৃষ্টিপাতে মানুষগুলো মন খারাপের রাজ্যে পৌঁছাই,
সেদিন গভীর রাতে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়,নিশুতি বড্ড ভয়ংকর ছিলো,মোমবাতি নিয়ে আলোর প্রদীপ বহমান, কৃত্রিম উপায় তৈরিকৃত চলমান রাত্রিকাল,অধিক দোয়া পড়ে পড়ে ভাঙা বাড়ির মানুষজন,হঠাৎ নিদ্রা এসে ধাক্কা দিলে সবাই ঘুমের জগতে পৌঁছে যাই,সর্বনাশ ঠিক নিকটতম হয়ে যায়।

(সুপ্রভাত)
ভোরের আলো ফুটে গেলো, দরজা খুলে তিতাসের স্নিগ্ধ বাতাস নদীর অপরূপ দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হয় (আব্দুল করিম সাহেব),
ভাঙা বাড়ির মূল অংশীদার,করিম সাহেব বেশ সাদাসিধা এক প্রকার নরম প্রকৃতির মানুষ,বয়স ৪৮ বসন্ত অতিবাহিত করেছেন,ভ্রমর কালো চুলে তার সাদা রঙ দেখা দিলো কিছুকিছু,কিঞ্চিৎ লম্বা হাসির মানুষ,পরিবারের সবার আহার যোগানো তার নিত্যদিনের কর্ম।
তবে হ্যাঁ
কচুপাতার পানি যেমন দীর্ঘস্থায়ী নয়,ঠিক তেমনি আব্দুল করিম সাহেবের অহার যোগানো ক্ষণস্থায়ী অধিক সময় হয়।
আব্দুল করিম সাহেব দরজা খুলে দেখে সারারাতের বৃষ্টিপাতে নদীর তীরে অটুট থাকা কুঁড়েঘর তার অনেকটা ক্ষতিকারক হয়ে পড়েছে,হৈচৈ আর কোলাহল মিশ্রিত চারদিক,ঘটনাস্থলে উকিঝুঁকি সকল মানুষ,শত বেদনা নিয়ে জোরা-চোখে পানি টলমল,
তবু অশ্রুজল বাহির করে না,আকাশের দিকে বেদনা দেখে নিজের বেদনা ভুলে যায় আব্দুল করিম সাহেব,ক্ষতদরিদ্র মানুষের চোখের পানি নিমেষে আসে না, কেননা দুঃখবহন করে করে তাদের চোখের পানি শুকিয়ে যাই জন্মসূত্র ধরে,
দুঃখে যাদের জীবন গড়া তাদের আবার কিসের সুখ,আঃ করিম সাহেব মনে মনে ভাবে ভাঙা ঘরে বসত করে সংগ্রহ করেছি শতকোটি অগ্নিময় দুঃখ।