মতামত

এই প্রবণতা শেষ হবে কবে? | নুরুজ্জামান লাবু

এই প্রবণতা শেষ হবে কবে?

বুধবার হাইওয়ে পুলিশের সাভার সার্কেলের একজন সহকারী পুলিশ সুপার খুন হয়েছেন। এটা নিয়ে আমি দুটি নিউজ করেছিলাম। অনলাইন মাধ্যমে কাজ করি বলে সঠিক তথ্যটি আমাদের দ্রুততার সঙ্গে আপ করতে হয়। এক্ষেত্রে কখনো কখনো দু-একটি তথ্য ভুল হয়ে যায়। অনলাইনের সুবিধা হলো- দ্রুততার সঙ্গে তা সংশোধন করা যায়। গতকালের প্রথম নিউজে আমি এএসপি মিজানের ব্যক্তিগত গাড়িটি তার বাসার গ্যারেজে উল্লেখ করেছিলাম। রূপনগর থানার ওসি আমাকে সেরকমটাই জানিয়েছিলেন। ক্রসচেক করতে পারিনি। একারণে নিউজে আমার একটি প্রশ্ন ছিল, গাড়ি বাসার গ্যারেজে রেখে চাবি নিয়ে তিনি বের হলেন কেন?

পরবর্তীতে আরো বিস্তারিত খোঁজ-খবর নিয়ে জানতে পারি, গাড়িটি তার বাসার গ্যারেজে নয়, অফিসের গ্যারেজে রাখা। একারণে তিনি চাবি নিয়ে বের হয়েছেন। অফিস থেকে গাড়ি নিয়ে তারপর চন্দ্রায় সড়ক চলাচল নির্ভিঘ্ন করতে ডিউটি শুরু করবেন।

কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো, আজকের প্রায় সবগুলি প্রিন্ট মিডিয়ায় আমার সেই নিউজের ভুল অংশটুকু কপিপেস্ট করেছে। নিজেরা কেউ ক্রসচেক করেননি। রাত ৯টার পর আমার বিস্তারিত রিপোর্ট প্রকাশিত হওয়ার কারণে প্রিন্ট মিডিয়ার এডিশন চলে যাওয়ায় তারা তা সংশোধন করেননি বা সবাই যার যার বাসায় চলে যাওয়ায় কারো চোখে পড়েনি।

আমাদের দেশে সাংবাদিকতা এখন কপিপেস্টের যুগ অতিক্রম করছে। হাজার হাজার অনলাইন কপিপেস্ট করছে। বড় বড় গণমাধ্যমগুলোও এর থেকে পিছিয়ে নেই। তারাও একই কাজ করছে। অথচ এতটুকু ক্রেডিট দিতে তাদের আপত্তি। কেউ কেউ সারাদিন আড্ডাবাজি করে সময় কাটিয়ে বিকেলে অনলাইন থেকে নিয়ে কপিপেস্ট মারবে, কিন্তু ক্রেডিট দিবে না। এমনও হয় যে কপি করে নিজের নামে বাইলাইন স্টোরিও করেছে।

এই বিষয়টি সার্বিকভাবে প্রফেশনাল জার্নালিজমের ক্ষেত্রে অত্যন্ত খারাপ একটি কাজ। আপনি কষ্ট করে বাড়তি তথ্য দিলেন তা অন্য একজন নিজের নামে চালিয়ে দিল। অথচ যতটুকু তথ্য নেয়া হচ্ছে ততটুকুতেও ক্রেডিট দেয়ার বালাই নেই। ইন্টারন্যাশনাল মিডিয়াগুলো দেখেন, তারা কিন্তু একে অন্যের যতটুকু তথ্য নিচ্ছে ততটুকুরই ক্রেডিট দিচ্ছে। আমাদের দেশে এই প্রবণতা শুরু হবে কবে?

হোলি আর্টিজানে হামলার একবছর নিয়ে কথা হচ্ছিল এক সহকর্মীর সঙ্গে। এই বিষয়ে আমার একটি বই আছে। দীর্ঘ অনুসন্ধানের ফসল হিসেবে হোলি আর্টিজানের নারকীয় সেই ঘটনার আদ্যোপান্ত আছে বইয়ে। সেই সহকর্মী বলছিলেন, আপনার বই থেকে তথ্য নিয়ে ক্রেডিট দিয়ে ছাপার কথা বলেছিলাম, কিন্তু সিনিয়ররা রাজী হননি। হবেও না। তার ভাষ্য, এরা চৌর্যবৃত্তিকে সায় দিবে, তবু অন্যের ক্রেডিট দিবে না।

এই যদি হয় আমাদের গণমাধ্যমের চরিত্র, তাহলে প্রফেশনালিজম আসবে কিভাবে?

 

ফেসবুক পোস্ট: June 22 at 9:53pm