অণুগল্প

আমি খুব হিংসুক ও পরশ্রীকাতর : মোঃ ফজলুল কাদের

আমি যখন সুইজারল্যান্ডের অনুপম নির্মল পরিবেশ, প্রতিবেশ দেখি, হিংসায় ক্ষোভে জ্বলে পুড়ে যাই ; কেন আমাদের দেশে এমন হয় না?

যখন দেখি সিংগাপুর শহরের নিসর্গের এমন উন্নতি হয়েছে যে পাখিরা সব শহরে ফিরে আসছে; আমার ভারি হিংসা লাগে; কেন ঢাকা শহর সবুজ হয়ে পাখির কুজনে ভরে উঠেনা।

স্ক্যান্ডেভিয়ান দেশগুলোর ধনি গরীবের বাচ্চাদের যখন একইরকম উচ্চমানের শিক্ষার সূযোগ দেখি, আমার স্রেফ নির্ভেজাল হিংসা লাগে ; কেন এমনটা আমাদের দেশে হয় না?

নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ড শহরকে বিশ্বের এক নম্বর শহর হতে দেখে পেছন থেকে ৪র্থ শহরের অধিবাসী আমি রীতিমত হিংসায় বিদীর্ণ হই। কেন আমাদের অনেকের সন্তানরা ইনহেলার নিয়ে নির্জীব জীবন কাটাবে?

বাহিরের বহু দেশে যখন দেখি প্রাণবন্ত উচ্ছল মানুষের মেলা, তখন তূলনা করি আমাদের প্রাণশক্তির ঘাটতিতে ভরা বিষন্ন জনতার মুখগুলো, তখন উচ্ছল সব মুখগুলো দেখে যে অনুভূতি জাগে তা নির্ঘাত হিংসা।

যখন বিদেশের রাস্তা ঘাট বানানোর ১৪ বছর পরেও শুনি সে গুলো আর মেরামত করা হয়নি, তবুও সেগুলো কি চমৎকার, তখন শুরু করি তুলনা আর কি বলবো ভেবে পাই না।

আমারই বন্ধু সপু যখন ভোজবাজির মত অবস্হা পাল্টে ফেললো, আমার যে অনুভূতি হয়, নিন্দুকেরা তাকে পরশ্রীকাতরতা বলে।

আমার হিংসা এবং পরশ্রীকাতরতার লম্বা ফিরিস্তি দিলে মহাভারত হয়ে যাবে। যা কিছু সুন্দর দেখি তা কেন আমার হয় না, আমাদের হয় না? আমি জ্বলতে থাকি। আমার ও আমাদের এ ব্যাধি দূর করার কোন পথ খুঁজে পাই না। এ অসূখ দূর করার জন্যে আমাদের মত গুলো বাস্তবায়নের পথ খুঁজে পাই না; শুধু একালে নয়, বহুকাল ধরে।

টুক টুক করে কচ্ছপের মত এগুচ্ছি বটে, কিন্ত অন্যরা সব যে হরিণের মত এগুচ্ছে। আর আ্মি বাংগালী রয়ে যাচ্ছি হিংসুক হয়ে। হয়তো এ হিংসা যে আকাংখা থেকে উৎসারিত, তাতেই রয়েছে আমার ব্যাধিমুক্তির ঔষধের সন্ধান। আমরা তার সন্ধান পেয়ে যাবোই। আমার মত লোকরাই তো এদেশে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ।

(বাদ এশার বুদ বুদ চিন্তা)

লেখক: মোঃ ফজলুল কাদের, ‘অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক, পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ)।’