রঙের জীবন

অহনার লিপস্টিক || উৎসব আহমেদ

অহনার লিপস্টিক

উৎসব আহমেদ

 

দাদা আমায় একটা লাল লিপস্টিক কিনে দিবি!বলে অহনা মুখটা মলিন করে তাকালো দীপুর দিকে দীপু অহনার বড়ভাই বাবা মা মারা যাওয়ার পর অহনাকে খুব আদরযত্নে বড় করেছে দীপু।টাকার অভাবে নিজে পড়ালেখা করতে পারেনি কিন্তু একমাত্র আদরের ছোটবোন কে প্রাইমারী শেষ করে মাধ্যমিকে ভর্তি করিয়েছে।

 

বাবার স্বপ্ন ছিলো দীপু ডাক্তার হবে কিন্তু এক নবান্নে ধান কাটার সময় কালবৈশাখীরে ঝড়ে ধানক্ষেতে বজ্রপাতে বাবা মারা যায় কিছুূদিনপর মা ও রাতের গভীরে দুই ভাইবোনকে ছেড়ে পরপারে পাড়ি জমায় এতীম হয়ে যায় ওরা ভাইবোন।

 

তারপর থেকেই সংসারের হাল ধরে দীপু

ইটভাটায় কাজ শুরু করে এখন তার একমাত্র স্বপ্ন ও আশা হল ছোটবোন অহনাকে ডাক্তার বানাবে।নিজে ডাক্তার হতে না পারলেও বোনকে ডাক্তার বানানোর স্বপ্ন বুকে নিয়ে রোজ ইটভাটায় যায় দীপু।

 

সারাদিন কাজকরে এসে লক্ষ্মী বোনের হাসিমুখটা দেখলেই দিনের সব ক্লান্তি ভুলে যায় সে।পৃথিবীর সবকিছু সহ্য করতে পারলেও কিন্তু বোনের মলিন মুখ সে সহ্য করতে পারেনা।সাধ্যের মধ্যে কোন আবদার কখনই অপূর্ণ রাখেনি সে।আজ বোনটি ভায়ের কাছে লাল লিপস্টিক চেয়েছে,দীপু মনে মনে ভাবলো আজ সন্ধ্যায় আসার সময় মহাজনের কাছথেকে দুইশত টাকা নিবে আর বোনের জন্য লিপস্টিক কিনে আনবে।

ভাইয়ের চুপচাপ নিরবতা দেখে অহনা বলে উঠল”কি রে দাদা দিবিনা আমায় একটা লিপস্টিক কিনে?

দীপু:আচ্ছা আমার লক্ষ্মীটি  কাজ থেকে আসার সময় নিয়ে আসবো তুই এখন স্কুলে যা।

 

অহনা:দাদা আমার স্কুলে যেতে ভালো লাগেনা।

দীপু:কেন কি হয়েছে কেউ কিছু বলেছে? আমায় বল কি হয়েছে ?

 

অহনা :দাদা রোজ স্কুলে যাওয়ার সময় কাঠবাগানের ঐখানে মিন্টু আমাকে খারাপ খারাপ কথা বলে আমার ভয় লাগে দাদা।

দীপু:থাক তুই মন খারাপ করিসনা আমি মিন্টুর বাবার কাছে বলে দিবো তাহলে আর তোকে বিরক্ত করবেনা আর তোর ভয় পেলে চলবে? তোকে তো ডাক্তার হতে হবে বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে হবে

 

অহনা:আচ্ছা দাদা আমি যাই তাহলে আমার জন্য লিপস্টিক আনবি কিন্তু!

দীপু:ঠিক আছে আমি নিয়ে আসবো।

 

অহনাকে বেশ খুশিখুশি দেখাচ্ছে সে দৌড়ে ব্যাগ নিয়ে বের হয়ে যায় স্কুলের উদ্দেশ্যে

একটু এগোতেই সামনে কাঠবাগান এই কাঠবাগানে আসলেই অহনার খুব ভয় হয় এখানে মিন্টু নামের এক বখাটে কয়েকটা ছেলেকে নিয়ে আড্ডা দেয় আর প্রতিদিন অহনা যাওয়ার সময় অহনাকে বাজে কথা বলে। আজো অহনা কাঠবাগানে এসে মাথানিচু করে যাচ্ছে।

 

অহনাকে দেখে মিন্টু অহনাকে উদ্দেশ্য করে ওর বন্ধুকে বললো ‘দেখ মামা মালটা দিন দিন সেই হইতাছে মন চায় ধইরা ভইরা দেই’ তারপর মিন্টুর বন্ধু বললো ‘তয় মামা ধর হাহাহা’ ভয়ে গলা শুকিয়ে আসছে অহনার সর্বশক্তি দিয়ে চেষ্টা করছে দ্রুত বাগান পর হয়ে যাবার দ্রুত সে পার হয়েও গেলো।বাগানটা পার হয়ে যেন সে হাফ ছেড়ে বাঁচলো

 

এইতো সামনেই স্কুল দেখা যায় স্কুলে যাওয়ার পর মনের সব শংকা কেটে গেলো অহনা খুব ভালো ছাত্রী স্কুলের সব শিক্ষক শিক্ষিকাগণ অহনাকে খুব স্নেহ করে অহনা খুব নম্র ভদ্র মেয়ে ও বটে।

 

স্কুল শেষকরে বাড়ীতে চলে আসে অহনা তার যেন আর তর সইছেনা কখন,ভাইয়া লিপস্টিক নিয়ে আসবে

 

সন্ধার সময় দীপু আসার পর সাথে সাথেই জিজ্ঞাসা করলো”দাদা আমার লিপস্টিক এনেছিস”।

দীপু:না রে বোন আনতে পারিনি মহাজন টাকা দেয়নি (মুখ গোমরা করে)তুই মন খারাপ করিসনা

অহনা:আচ্ছা দাদা ঠিক আছে আমার লাগবেনা লিপস্টিক, তুই আমার জন্য দোয়া করিস।

 

হঠাৎ অহনাকে চমকে দিয়ে দীপু পকেট থেকে লিপস্টিক বের করে বললো এইনে পাগলী বোন আমার তোর লিপস্টিক দাদার হাতে লাল লিপস্টিক দেখে

অহনা খুশিতে দাদাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলো।

 

পরদিন সকালে অহনা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে অনেক সময় নিয়ে ঠোঁটে সুন্দর করে লাল লিপস্টিক মেখে ফিকফিক করে হেসে দাদার কাছে গিয়ে বললো”দেখ দাদা আমি ঠোঁটে লিপস্টিক দিয়েছি। দীপু অহনার দিকে তাকিয়ে বোনের সুন্দর হাসি মাখা মুখটি দেখে খুশিতে চোখে জল এসে পরলো

 

অহনাকে আজ খুব সুন্দর লাগছে আল্লাহ সম্পূর্ণ রূপ দিয়েই ওকে সৃষ্টি করেছে ঠোঁটে লাল লিপস্টিক দেয়াতে যেনো মুখটা আরো ফুটে আছে অসম্ভব সুন্দর লাগছে।

 

ব্যাগ কাঁধে নিয়ে চলে গেলো অহনা স্কুলের উদ্দশ্যে কাঠবাগানের সামনে যেতেই মিন্টুদের কথার আওয়াজ শুনলে অহনা ভয়েভয়ে বাগানের ভিতর ঢুকলো

সেখানে দেখলো মিন্টু আরো বেশ কয়েকজন ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে অহনাকে দেখে একজন বলে উঠলো

“উফ মাম্মা লাল লিপস্টিক লাগাইছে রে আয় মামা লাল কইরা দেই”

অহনা ওদের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় মিন্টু ডাক দিলো অহনাকে

মিন্টু:ঐ ছেমড়ি খাড়া

অহনা: জ্বী

মিন্টু :তোর লাইগা কি আমরা মনমতো কথা কইতে পারুম না?তোর ভাই আমার বাপেরে কি কইছে জানছ?

অহনা:জ্বী না ভাইয়া জানিনা প্লিজ আমার ভায়ের সাথে কথা বইলেন আমি এখন যাই আমার স্কুলে যেতে দেরি হয়ে যাচ্ছে।

মিন্টু:তোর ভাই আমার বাপেরে কইছে আমি তরে খারাপ কথা কইছি খাড়া স্কুলে তো যাবি তার আগে তরে আমরা কতটা খারাপ হেইডা বুঝায় দেই ঐ আকাশ মাগীটারে ধর!

 

অহনা:ভাই প্লিজ আমাকে মাফ করে দিন

মিন্টু: হাহাহা আইজকা বুঝবি আমরা কতটা খারাপ তর লিপস্টিক দেয়ার সাধ জনমের মতো মিটাইয়া দিমু হাহাহা

 

অহনা দৌঁড়ে পালাবার চেষ্টা করলেও জামার পেছনদিক থেকে টানদিয়ে মাটিতে ফেলে দেয় মিন্টু, অহনার চিৎকারে যেন বাগানের প্রত্যেকটা গাছ নিজেকে আঁকড়ে থাকা শেকড় ছিঁড়ে বেরিয়ে আসতে চাইছে

 

পালাক্রমে ধর্ষনের পর মাটিতে পরে থাকে অহনার নিথর দেহটি ঠোঁট কেটে রক্ত বেড়িয়ে গেছে এই ঠোঁটে অহনা আর কোনদিন লিপস্টিক দিবে না. খবরপেয়ে পাগলের মতো ছুটে আসে দীপু।বোনের দেহটি মাটিতে পরে থাকতে দেখে ও যেনো নিজেকে বিশ্বাস করতে পারছেনা চিৎকার করতে চাইছে কিন্তু মুখ দিয়ে কোন আওয়াজ বের হচ্ছে না।

 

কথায় আছে ‘অতি সুখে কাতর অতি দুঃখে পাথর’ দীপু যেন আজ পাথর হয়ে গেছে হঠাৎ করে দীপু দৌঁড়ে বাড়ীতে গিয়ে ঘরথেকে রামদা নিয়ে বেড়িয়ে আসে ও জানে আজ পৃথিবীর কোন শক্তিই ওকে থামাতে পারবেনা দৌঁড়ে যায় মিন্টুদের বাড়ীর দিকে।

 

  1. মিন্টু তখন বাড়ীর কোনায় আড্ডা দিচ্ছিলো আর কার কেমন লাগলো সেটা নিয়ে হাসি তামাশা করছিলো, দীপু পেছন থেকে দৌঁড়ে গিয়ে রামদার এক কোপে মিন্টুর ঘার থেকে মাথা আলাদা করে ফেলে,ওর সাথের গুলো দৌঁড়ে পালিয়ে যায়।

মিন্টুর মাথাটি হাতে করে থানায় হাজির হয় দীপু…….বড় দারোগার টেবিলে গিয়ে বলে উঠল”আমার বিচার আমি করেছি এখন আমার বিচার আদালতকে দিন”!