নিত্যদিনের ন্যায় জোর কদমে ২০ মিনিট হাটিবার রেওয়াজটা অদ্যাপি বলবৎ রাখিয়া মেইন রোডের পাশের এবড়ো খেবড়ো রাস্তা দিয়া হাটিতেছিলুম।আমার লক্ষ্য একটাই যে করিয়াই হউক রোগা হইতে হইবে।বিবাহের বয়স দিন দিন যে হারে কমিয়া যাইতেছিল এমতাবস্থায় বিবাহ করিবার উত্তম সময়ে অবস্থান করিবার প্রাক্কালে মা বাবার একখানা অদৃশ্য চাপ অনুভব করিলুম।ওজন না কমাইয়া বিয়ে করিবার সম্মত হইলে পাত্রী পক্ষ যে নেহায়েত অপছন্দ করিবে ইহা এক প্রকার নিশ্চিত হইয়াই ছিলুম।পাত্রী পক্ষ আমাকে লইয়া অবাঞ্ছনীয় ভাবে অদৃশ্যমান লেনদেনের মত হাসি ঠাট্টায় মাতিয়া উঠুক ইহা কখনই চাইতুম না।তাইতো মাতাকে ছাপ ছাপ বলিয়া দিলুম-
-এই মুহূর্তে বিবাহ করিবার কোন অভিপ্রায় নাই।
– দেখ খুউব উত্তম সম্বন্ধ বাবা।মেয়ে দেখিতে শুনিতে মাসশাল্লাহ খুউব সুশ্রী।
-মা বুঝিতে পারছেন না কেন?অদ্যাবধি আমি বিবাহ করিবার উপযুক্ত সময়ে অবতীর্ণ হইয়া উঠিনি।আমাকে আরও কিয়ৎপরিমাণ নিজেকে গুছিয়া লইতে হইবে
-আমার এত কিছু বোধগম্য নহে বাবা তোমার বউ দেখিয়া যাইতে চাই এই শেষ কথা ইত্যাদি ইত্যাদি।
এ লইয়া সবাই আমার নৈকট্যে আসিয়া আমাকে চাপ দিতে লাগিল,বিবাহ যে করিতেই হইবে ইত্যাদি ইত্যাদি। এরই অভ্যন্তরস্থ গ্রামে হুলস্থুল কান্ড ঘটিয়া গিয়াছে।এক পক্ষ বলিয়া বেড়াইতে লাগিল উকিল বাবুর ইয়ে নাই,বিশ্লেষণ করিলে যাহা বোধগম্য তাহা হইল,যৌবন শক্তি হারাইয়া আমি উকিল বাবু দেউলিয়া হইয়া গিয়াছি ইত্যাদি ইত্যাদি।রাস্তা দিয়া যাইবার প্রাক্কালিন ছেলে বুড়ো, মহিলারা আমার মুখপানে এমন করিয়া তাকাইয়া থাকে যেন আমিই তাহাদের ঘরের সিঁধ কাটিয়া কোন অবেলা নারীর ইজ্জত হানি অর্থাৎ বলাৎকার করিয়া এই গ্রামেই ল্যাং ল্যাং করিয়া ঘুরিয়া বেড়াইতেছি।কি লজ্জা কি লজ্জা?।উৎসুক জনতার চাহনি যদিও তাৎক্ষণিক আমাকে বড্ড পীড়া দিতে থাকিত উহা বহুত কষ্টে সহ্য করিয়া এক প্রকার অনিচ্ছা সত্ত্বেও চলিতে লাগিলুম।এদিকে অশান্তি বাড়িয়াই চলিতেছে।
আজকাল কয়েক জন কবিরাজ ও আসা যাওয়া শুরু করিয়া দিয়াছে।কি কি হইয়াছে কি কি রূপে সমাধান করা যাইবে? ইহার একটা তালিকাও প্রস্তুতকরণ হইয়া গিয়াছে ইতিমধ্যে। বড় বড় সারিবাদি সালসার বোতল আসিয়াছে ইহা নাকি সাধনা ঔষধালয়ের অনেক কার্যকরী হাতির মত,ঘোড়ার ন্যায়,বাঘের মত ক্ষিপ্র গতি শক্তি বর্ধন কারী পরুষত্ব বাড়ানোর একমাত্র টনিক। সমাজের এই রূপ কান্ড দেখিয়া আর স্থির থাকিতে পারিলুম না। মাকে বলিলুম আমি বিবাহ করিব আপনারা আয়োজন শুরু করিয়া দিতে পারেন। ইহা শ্রবণ করিবার পর বাড়িতে এক রকম আনন্দেত বন্যা বহিয়া গেল।নতুন নতুন শাড়ী শরীরে জড়াইয়া ভাবিদের সেকি বুনো উল্লাস।কিন্তু এই উল্লাসে ছেদ পড়িতে বিন্দুমাত্র ও সময় লাগিলনা।বিদেশ ফেরত ললনা আমার ক্যানভাস দেখিয়া বলিয়াছে এইরূপ মোটা ছেলে বিবাহ করা উহার পক্ষে ইম্পসিবল যাহা গ্রহণযোগ্য নহে। আরও চিকন হইতে হইবে,সময় মাত্র চার মাস।কি আর করা পরিবার ইহাই এক প্রকার বাধ্য হইয়া মানিয়া লইয়া কি রূপে? আমার স্বাস্থ্য হ্রাস করানো যায় ইহা লইয়া রীতিমত জুরিবোর্ড বসিয়া মিটিং চলিল।রায় আসিল আমাকে নিত্যদিন ২০ মিনিট করিয়া হাটিতে হইবে।মায়ের আদেশ অমান্য করিবার দুঃসাহস দেখাইতে পাড়িলাম না।তাই অদ্য এক মাস যাবত হাটাহাটি করিতেছি ওজন যে খুউব একটা কমিতেছে তা কিন্তু নহে,তবে নিজেকে যে অদ্য অনেকটাই হালকা হালকা লাগিতে থাকিলো ইহাই বা কম কিসে?যতই হউক নিজস্ব অক্ষমতা লইয়া তো আর কেহ টিপ্পনী কাটিবার কোনরূপ অস্বস্তিকর মূলক লজ্জায় পড়িবার ভয় থাকিলনা।
আপনার মন্তব্য লিখুন