আজ ২৫ শে ডিসেম্বর আমার ৩৪ তম জন্মদিন।
৩৫ বছর বয়স হইলে অনেক মেয়ের জীবন শেষ যায়। আমার জীবন যেন শুরু হইল।
খুব কম মানুষ আছে যারা শৈশবে ফিরে যেতে চায় না, আমি সে কম মানুষের একজন। আমার শৈশব আমি একেবারেই পছন্দ করি না।আমার এই সচেতন-স্বাধীন-স্বনির্ভর জীবনই আমি বারবার ও সবসময় চাই। পরনির্ভর ও পরাধীন শৈশব আমার জীবনের সবচেয়ে বাজে সময়।
প্রতি বছরই আমি আমাকে নিয়ে ভাবি।ভাবি যে বছরটা কেমন গেল। কী কী করলাম। কী কী করব ভাবছিলাম। নিজেকে মনে মনে আমি যে ছবিতে কল্পনা করি সে ছবিটা কতটুকু হলো? আসছে বছর কী করবো? এ বছরের কোন ভুলগুলি আর করব না? কোন কাজগুলি শিখব আর কোনগুলি করবো? মোবাইল রিবুট দেয়ার মত আমিও সেটিংস চেঞ্জ করি। এটা আমাকে অনেক রিফ্রেশ করে।
আপনিও করে দেখতে পারেন। বেশ কাজের।
প্রতি বছরই আমি যখন এসব লিখতে বসি দেখি, ওয়াও এমন চমকপ্রদ বছর আমার জীবনে কখনো আসে নাই তো!
এবারো একই কথা মনে হচ্ছে। সবসময় একই কথা মনে হয় ভেবে একটু লজ্জাও লাগতেছে। কিন্তু এ বছর এটা লিখলে কেউ কিছু মনে করবে না তাই পাবলিকলি বলে দিলাম। 🙈
এবার বছরের হিসাবে মনে হচ্ছে ২০২২ সালই আমার জীবনের একটা মহাগুরুত্বপূর্ণ বছর। মানে প্রতি বছর যেমন মনে হয় তেমন না, আমার ৭০ বছরেও এ ২০২২ সালটা মনে থাকবে।
এ বছরই নিজেকে যেন নতুনভাবে আবিস্কার করলাম। ব্যক্তিগত, সামাজিক ও অর্থনৈতিক— তিন স্তরেই নিজের নতুন এক ইমেজ তৈরি হলো। কিছুটা পরিকল্পনামাফিক, আবার কিছুটা কাকতালীয়।
যেমন, মানুষের কাজে লাগে এমন ভিডিও বানাবো বাংলা ভাষায়—এটা ছিল এ বছরের প্ল্যান। কিন্তু ভিডিও থেকেই একটা কোম্পানি হয়ে যাবে আমার এটা ছিল একেবারে কল্পনার বাইরে।
পরিকল্পনা ও কল্পনা দুটাতেই যা করার কথা ছিল কিন্তু ব্যর্থ হলাম, সেটা হলো— আমার তৃতীয় উপন্যাস।এটা কোনোভাবেই শেষ করা গেল না। বা আমার মনমত হলো না।
যাই হোক সন্তান কিংবা ভিডিও কিংবা কোম্পানি— এগুলোর চেয়েও যে কারণে এ বছরটা আমার কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ সেটা হলো নিজের সাথে নিজের সংযোগ।
আমার মনে হচ্ছে আমি এখন নিজেকে আরো ভালো বুঝতে পারি ও নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। বিয়ে এবং সন্তান কিংবা পরিবার নিয়ে আমার যে বাজে কথাগুলি (😝) আমার ঘনিষ্ঠরা আমার মুখ থেকে শোনে, আমি কিন্তু সেগুলি থেকে একচুলও সরি নাই।
কিন্তু এ বিষয় কিংবা মানুষের “সুখী” হওয়া নিয়ে আমার মধ্যে একটা নির্দিষ্ট আইডিয়া তৈরি হইছে। এই আইডিয়া আবছাভাবে আগেই ছিল। কিন্তু এখন একেবারে পোক্ত হইছে বলে ফিল হয়।
এটা যে কিভাবে অল্প কথায় বোঝানো যাবে!
ধরেন আপনি একটা নতুন গাড়ি কিনে গাড়ি চালানো শেখা শুরু করলেন। প্রথমে কিন্তু বেশ অস্বস্তি লাগবে। ভয়ও লাগবে। পাশ থেকে ট্রাক আসলে বুকে খামচে ধরবে আশঙ্কা। লেইন চেঞ্জের সময় পা কাঁপবে। গাড়ির দরজা বন্ধ করতে গেলে সুইচের ভুলে জানালা খুলে যাবে।
আরো কত কিছু যে হবে!
তারপরে একদিন আসবে দেখবেন আপনি খুব সুন্দর একটা জায়গায় গাড়ি চালায়ে যাচ্ছেন। সামনে প্রশস্ত রাস্তা আর নীল আকাশ। দুই পাশে নদী আর পাহাড়। আকাশ ঝকঝকে, আবহাওয়া দারুণ। আপনার জুতা ঠিক আছে, গাড়ির ব্রেকে আর স্লিপ কাটতেছে না। আপনার প্রিয় কফিটা গাড়িতে। চুমুক দিতে দিতে চারপাশ দেখতেছেন আর হঠাৎ রেডিওতে আপনার প্রিয় গানটা বেজে উঠলো।
আপনি ভলিউম বাড়িয়ে দিয়ে হেসে মাথা নাড়তে নাড়তে ভাবলেন— আমি তো এইভাবেই একদিন গাড়ি চালাবো বলে ভাবছিলাম, সিনেমার মতো।
তখন আমার এরকমই ভালো লাগবে বলে কল্পনা করছিলাম—ওয়াও! এটাই তো সেটা!
২০২২ সাল যেন আমার প্রিয় গানটাই, যেটা বেজে উঠে পুরো পরিবেশ কমপ্লিট করলো। লেখালিখিটা হয় নাই বেশি, এই যা, তবে আসছে বছর ফাটায়ে লিখবো। 🥳
জন্মদিনের শুভেচ্ছার জন্য ধন্যবাদ।
পারমিতা হিম
২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২২
আপনার মন্তব্য লিখুন