অণুগল্প

বন্ধ জানালাটা খুলতেই হুট করে শীতল দমকা হাওয়া চোখমুখ প্রাণ জুড়িয়ে দিলো

বন্ধ জানালাটা খুলতেই হুট করে শীতল দমকা হাওয়া চোখমুখ প্রাণ জুড়িয়ে দিলো। চাঁদের মিঠে আলো বাইরের পিচের রাস্তা নীলাভ আকৃতির করে তুলেছে। ল্যাম্পপোষ্টের হলুদ আলো যেনো থমকে গিয়েছে রাস্তাধারে আড়মোড়া ভাঙা রুগ্ন কুকুরটির চোখজুড়ে। চারদিকে শীতল পরশ। আশ্বিনের শুরু দিনকয়েক পরেই। সপ্তাখানেক পর মহালয়া। মনের মাঝে গুড়গুড় করে বাদ্যবেজে চলে অজান্তেই। কি জানি এক সরল খুশি রন্ধ্রে রন্ধ্রে বয়ে বেড়ায়৷

ঝড়-বৃষ্টি-তীব্র গরম হঠাৎ করেই থমকে যায় অদৃশ্য দেয়ালে৷ ভোরের শেষ দিকে ঠান্ডায় শিউরে ওঠে শরীর, কাঁথা লেপ্টে জড়িয়ে নেয় । কেউবা প্রিয়জনের শরীরের উত্তাপে পরম প্রশান্তিতে পার করে উষা লগ্ন।
প্রকৃতির হঠাৎ নির্মলতায় আমরা জেনে যাই “মা আসছেন “। অদ্ভুত এই অনুভূতি ; কি দারুন মায়াময়। নদীর স্রোত ধীর হয়ে যায়, আকাশ হয়ে ওঠে স্বচ্ছ তুলোময় মেঘের ভেলা, একশো আটটা পদ্মের খোঁজে লেগে যায় বৃদ্ধ মালি, সজীবতায় ভরে উঠে গাছ-গাছালী, কুটুমপাখির ডাকে গৃহস্ত তৈরী সম্ভাব্য অতিথির স্বাগতমে।

পূজোর আনন্দই তো প্রিয়জনদের ঘিরে। কত শত ব্যস্ততায় কাটতে থাকে সময়। কতরকম যে প্লান। ঘরের রং, ডেকারেশন, খই-মোয়া-মুড়কি-নাড়ু, শপিং, ঘরদোর পরিস্কার, হাজারটা কেনাকাটা কি নেই। পুজোর পাঁচদিন তো দেখতে দেখতেই কেটে যায় কিন্তু পুজোর মজা কিন্তু দু’মাস আগে থেকেই শুরু হয়ে যায়৷

কেমন হবে এবারের লাইটিং, ডেকারেশন, প্রতিমা, সাজসজ্জা। কতই যে মাথাব্যাথা সেসব নিয়ে। ধুনুচিতে কিংবা গানের তালে নাচ কেমন হবে তা নিয়ে কতই রিহার্সেল। মন কষাকষিও কম হয়না বৈকি৷
তেমনি মন দেয়া নেয়াও। প্রিয়জনকে নিয়ে স্বপ্ন দেখার ; এক মুহুর্তের জন্য দেখতে পাওয়ার। একটু একসাথে ঘুরতে যাওয়ার ; একটু পাশাপাশি বসে থাকার, একটু চোখে চোখ রাখার। একসাথে ধুনুচি নাচে কোমড় দোলানো -এ চাওয়াতে দোষ নেই, এই চাওয়াতে অসসতা নেই,এই চাওয়া যেনো প্রকৃতির ইচ্ছে।

একেকটা বছর পুজো গড়িয়ে যায় আমরা পরিবর্তিত হই৷ প্রকৃতি পরিবর্তিত হয়। সমাজের পরিবর্তন ঘটে। বয়স গড়ায় কিন্তু ভিতরটা সেই শিশুই থেকে যায়। পুজো আমাদের জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে একটুকরো সুখের ছোঁয়া দিয়ে যায়;জীবনটা রঙিন স্মৃতির ফ্রেমে বন্দি করে৷

বছর ঘুরে অনেকে সঙ্গী হারা হয়ে স্মৃতিআঁকড়ে আবেগতাড়িত হন ; অনেক নতুন প্রাণের উচ্ছাসে আনন্দে ভাসেন । পুজো আমাদের জীবনে নতুন-ভিন্ন দর্শনের উপলব্ধিতে ভাসিয়ে দিয়ে যায়।
আমরা হেরে যাই, আবার উঠি, আবার জিতি, আবার হারি কিন্তু ভেঙে পড়ি না। নতুন করে আবার শুরু করি ; আবারো একটি পুজোর অপেক্ষায় প্রহর গুনি।
সকলের মঙ্গলে প্রার্থনা করি ; সকলে মিলে পুজোকে সার্বজনীন উৎসবে রূপান্তর করি।
বহুজাতির এই দেশে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ভাগ করে নেই সুখ-দুঃখ-স্মৃতি-ভালোবাসার বন্ধন।

জীবনটাতো ভীষন ছোট্ট। তাতে সুখ গুলোও যেনো সোনার হরিন তাহলে সেটুকুই না হয় সকলে মিলে উপভোগ করি ; সম্প্রীতির আলোয় উদ্ভাসিত করি মঙ্গল প্রদীপ এবং চেতনা…….
আমি অনুভব করছি মায়ের আগমন।
আর আপনি……??

 

শুভ্র শোভন রায় অর্ক

থানাপাড়া, লালমনিরহাট