জীবনের গল্প

আমি প্রথম সেক্সুয়ালি এবিউজের শিকার হই কবে আমার মনে নেই, খুব ছোট থাকতে…

আমি প্রথম সেক্সুয়ালি এবিউজের শিকার হই কবে আমার মনে নেই, খুব ছোট থাকতে। তখন বুঝতাম ও না তেমন করে কিছু। প্রতিবেশী বড় ভাইয়ের কাছে মনে হয়, মনে পড়ে না আমার কিছু। তবে এই যে বড় হবার প্রক্রিয়া এটা খুব ভয়ংকর লাগতো আমার কাছে। আমি অনেক অনেক গল্প লুকিয়ে রেখেছি, আমার মস্তিষ্ক জোর করে চাপিয়ে রেখে ভুলে যেতে চেয়েছে। আমি বহু বহুদিন বলতে পারিনাই।
এই বিষয়গুলা সবার সাথেই ঘটে মনে হয়, বাকি সবাই কি করে? আমি কিছু করতে পারিনাই। ক্লাস ফোরে খুলনা যাচ্ছিলাম সেসময় বাসে যে ঘটনাটা ঘটেছিল সেটা ২০১৪ সালে এসে কোন একদিন রাতে আবিরকে বলতে গিয়ে হাউমাউ করে কেঁদে দিয়েছি, এই অতীতগুলা ভয়ংকর।
এই ট্রমাগুলো আমাদের পিছিয়ে দেয় হয়ত, দিনের পর দিন নিজের মধ্যে আদরের ছলে বয়স্ক আত্মীয়ের শরীর ছুঁয়ে দেয়ার গল্পটা বলা যায় না। এসব গল্প পাব্লিক্লি বললে মানুষ খারাপ ভাববে তাই বলেনা, কিন্তু আমার কি কোন দোষ ছিল? আপনি কী আমারের কাপড়ের দোষ দিবেন যখন গ্রাম থেকে যাত্রাবাড়ীতে রাস্তা পার হবার সময় পান খাওয়া এক লোক আমার বুকে হাত দিয়েছিল? দিতে পারবেন না, আমি তখন ক্লাস সিক্সে পড়ি, আমার গায়ে ১২তম জন্মদিনে উপহার পাওয়া সাদা ফ্রক। আমার বোনের দিকে আমি অসহায় হয়ে তাকিয়ে ছিলাম ওইদিন…বড় হয়ে আবিষ্কার করেছি আমার আশেপাশের সবাইকে এই অসহায়ত্বের মধ্যে যেতে হয়।

বাসায় একবার খুব সাহস করে বলে ফেলছিলাম এক আত্মীয়ের আমাকে এবিউজ করার ঘটনা, আমার বোন সেই আত্মীয়ের স্ত্রীকে কল করে বলার পর বলেছিল ” তোর বোন এমন কি সুন্দর যে আমার জামাই শুইতে যাবে?” বিশ্বাস করেন আমি ক্লাস ফাইভে পড়ি তখন, আমার বোন রেগে গেসিল কিছু বলতে পারেনাই। প্রেম করলে মানুষ বাচ্চাকাচ্চার স্বপ্ন দেখে, আমি প্রথমে ভাবতেই পারতাম না আমার বাচ্চাকাচ্চা হবে কারণ আমি ভাবতাম আমার মেয়ে হলে তাকেও কেউ রেইপ করার চেষ্টা করবে তার কোন আত্মীয়। এই এবিউজের গল্প কেউ কেউ জানে কেউ কেউ জানেনা, কিছু ঘটনা আমি কখনো কাউকে বলতে পারিনাই, পারবোও না এগুলা নিয়ে আমি বড় হচ্ছি।
কুয়াকাটায় বসে বলছিলাম বন্ধুদেরকে, আমি থামাতে পারিনাই আমি কেঁদেছি আমার একটা বন্ধু জড়ায় ধরে রাখসিলো সেখানে আরেকটা মেয়ে বন্ধু আর আমি কেঁদেছি এজন্য যে আমাদের এরকম জঘন্যভাবে বেঁচে থাকার গল্প আছে। বিশ্বাস করেন মেয়েরা যে বলে সব ছেলে খারাপ এটা এজন্য বলেনা যে তার হৃদয় কেউ ভেঙেছে সবচে বেশি বলে কারণ যারা এই নোংরা ঘটনাগুলো ঘটাচ্ছে তারা সবাই ছেলে।

আমি এরপরে মারতে শুরু করেছি, রাস্তায় বাসে কেউ কিছু করলেই মাইর। ছোটখাটো মানুষ তাও। ঝামেলা হলো একদিন যেদিন আমি মাইর দিলাম এবং ওই শূকরটাও আমাকে মাইর দিলো পালটা। জীবনে ঢাকাশহরে কাউকে মেরে আশেপাশের মানুষের সাপোড়ড়ট পাইনাই, বরং ভীড়ের সুযোগে মানুষ আরো গায়ে হাত দিতে চায়। আমি মনে রাখবো ঐদিনের কথা কারণ ওই মফস্বল এলাকায় মানুষজন ধরে ওই লোককে পিটাইসিল।
ব্যাগে এখনো এন্টিকাটার থাকে, গুলিস্তানে হাত কেটে দিসি কজনের এরকম এবিউজের পর তারপরেও দেখি আশেপাশে মানসিকভাবে অনেক অসুস্থ মানুষ। তারা কাপড়ের দোহাই দিয়ে, চরিত্রের দোহাই দিয়ে,চলাফেরার দোহাই দিয়ে এই ঘটনাগুলোকে জাস্টিফাই করতে চায় তখন ভাবি আসলে ক্লাস ফোর ফাইভে এবিউজের ঘটনা অস্বাভাবিক না এমনকি এরচে ছোট বাচ্চাও না। বাংলাদেশে আইন ও হয়ে যাচ্ছে বিশেষ অবস্থায় বাল্যবিবাহ, তাই কোন সমস্যা নেই।

নিজেকে নিয়ে ভয় পাইনা আর, অসুস্থ মানসিক বিকৃত পশুর পাপ দিয়ে স্পর্শ করেছে আমাকে, মেরেছি মার খেয়েছি সহ্য করেছি কেঁদেছি। এই গল্পগুলা বলতে সাহস লাগে, আমি এখনো নিজের স গল্প বলার মত সাহসী না কিন্তু আমি এখন এতটূকু সাহসী যে মার দিতে পারবো। এই যে ফ্রক পড়ে ঘুরে বেড়ানো ফুলের দলগুলা ভয়টা ওদেরকে নিয়ে হয়!
এই গল্পগুলা একদিন বলবো হয়ত, যেদিন আসলেই মেনে নিতে পারবো জঘন্য পরিস্থিতি দিয়ে যাওয়ার ঘটনা। আমি এমনি বড় হয়ে যাইনি সেইভাবে আপনার আশেপাশের কেউই এত সহজে আসেনি পার হয়ে।

ক্লান্ত হয়ে গেলাম এতটুকু লিখে,এম্নিতেই ভাল লিখি না তার উপর গুছিয়ে লিখতে পারলাম না । নিজের সাথে ঘটে যাওয়া এবিউজের কথা বলা সহজ না এটা জানলাম! মন খারাপ হয়ে গেল…ভাগ্নীকে মনে পড়ছে, ছোট একটা বাচ্চা কত সুন্দর ফুলের মত। আমিও ছোট ছিলাম এমন অথচ কত কি হয়েছে যে মনেই করতে পারিনা এখন আর। আমি এই লোকগুলার ক্ষেত্রে নিউটনের সূত্র বিশ্বাস করিনা, এরা ছোট বাচ্চাদের গা হাতিয়ে ধর্ষণ করে দিব্যি ঘুরে বেড়ায় তাদের কিস্যু হয়না আর আমরা বড় হই গাদাখানেক তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে তারপরে হয়ত বলি নয়ত বলিনা চেপে রেখে কান্না জমাই,এটাই তো গল্প!

#দূর্বা জাহান