নাসরিন সিমিঃ
দুবাইয়ের শপিং মলে আংটিটা দেখেই সাথে সাথে সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয় কৌশিক। দ্বিতীয়বার কোনো চিন্তা না করেই কিনে নেয় আংটিটা। পরের দিন ঢাকায় এসে পৌঁছে সে। এয়ারপোর্ট থেকে নিজের ফ্লাটে পৌঁছতে পৌঁছতে রাত দুটো বাজে।
এতো রাতে কী সুতন্নীকে ফোন দেয়া ঠিক হবে!! না কাল সকালে ফোন দিয়ে বলবো আমি ঢাকায়। তাছাড়া গত মাসখানেক ধরে যে তিক্ততা তৈরি হয়েছিল ওর সাথে সেটা সামনাসামনি দেখা করে ডিসিশন জানিয়ে ওকে আংটিটা গিফট দিতে হবে।
সুতন্নীর হাজবেন্ড মারা যাওয়ার পর একমাত্র মেয়েকে নিয়ে মায়ের সাথে থাকে। একটা বেসরকারি ব্যাংকে জব করে।
কৌশিক একা। পাঁচ বছর আগে বিয়ে করেছিল মাহীকে। বিয়ের পর কিছুদিন সুখেই কাটছিল কিন্তু হঠাৎ করেই একটা সমস্যা এসে সুখের মধ্যে কাঁটা হয়ে যায়। মাহী নেশাগ্রস্ত ছিল। প্রচণ্ড রকমভাবে হ্যালুসিনেশনে ভুগতো। সারাদিন মনের ভেতর মনগড়া কাল্পনিক গল্প ফেঁদে সেটা সত্যি মনে করে অশান্তি করতো। চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে দিতো। পরিবারের সবার উপদেশ মতো একটা বাচ্চা নেয়ার পরেও ঠিক হয়নি মাহী।
কৌশিক মনে মনে আতঙ্কিত হয়ে পড়ছিল তাদের ছেলের ভবিষ্যৎ নিয়ে। মাহীর বাবা-মায়ের সাথে কথা বলার পর তারা মাহীকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে আর ছেলে আদি কে লালন পালন করতে নিয়ে যায় তাদের কাছে। সেই থেকে কৌশিক একা।
বছর খানেক আগে সুতন্নীর সাথে পরিচয়। তারপর ঘনিষ্ঠতা হয়, জানাশোনা হয় দুজনের মাঝে। সুতন্নী কোনোদিন বিয়ের জন্য কৌশিককে জোর করেনি কিন্তু কৌশিকের বাবা-মা প্রচণ্ড জেদাজেদি করছিল ছেলের সাথে।
দুবাইয়ে আংটিটা দেখেই সাথে সাথে সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয় কৌশিক এবার সুতন্নীকে বিয়ের কথা বলবে।
গ্রীনরোডে সুতন্নীর ফ্ল্যাটে সন্ধ্যায় পৌঁছে যায় কৌশিক। সুতন্নীকে খুব সুন্দর লাগছে আজ। কফি শেষ করে পকেটে হাত দেয় কৌশিক আংটিটা স্পর্শ করে। আংটিটা পকেট থেকে বের করতে না করতেই মোবাইল ফোন বেজে উঠলো।
হ্যালো কৌশিক সাহেব বলছেন?
হ্যাঁ কে বলছেন?
নিউ মুক্তি ক্লিনিক থেকে বলছি। আপনার সাথে একজন কথা বলতে চাইছেন।
জি দিন।
কৌশিক আমি মাহী। তুমি কেমন আছো? বাবু কেমন আছে? এক বছর হয়ে গেছে তুমি আমাকে দেখতে আসোনি। প্লিজ কৌশিক একবার এসো। তোমাকে আমার খুব দেখতে ইচ্ছে করছে।
আচ্ছা আমি আসবো মাহী।
কৌশিক আংটিটা পকেটেই রেখে দেয়। সুতন্নীর ফ্ল্যাট থেকে বের হয়ে আসতে আসতে রাস্তায় দাঁড়িয়ে একটা সিগারেট ধরায়। ড্রাইভার গাড়ি নিয়ে সামনে আসতেই দরজা খুলে ভেতরে বসে।
স্যার এখন কোথায় যাবেন?
কৌশিক চমকে উঠে বলে ‘চলো হোটেল লা মেরিডিয়ান এ যেতে হবে। একটা বিজনেস মিটিং আছে। ফরেন ডেলিগেটস ওয়েট করছে।’
কৌশিক মনে মনে বলে
আমরা সবাই এ জীবনে কারো না কারো জন্য অপেক্ষা করি।
আপনার মন্তব্য লিখুন