অন্তর কথন সাহিত‌্য

লেখক-পাঠক সেতুবন্ধন রচনায় সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব গোপী সাহা || সুশান্ত কুমার রায়

লেখক-পাঠক সেতুবন্ধন রচনায় সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব গোপী সাহা
-সুশান্ত কুমার রায়

এই আভোগ-
একটি সংস্রবচ্যুত ভালোবাসার
দারুণ নিদারুণ সুখে,
এই অন্তরা-
একটি স্বতস্ফুর্ত কান্নার
নিরব আত্মদ্রোহে।

অন্তরায়-
মর্মে অন্তঃশীলা
প্রণতি জীবন ধর্মে,
সঞ্চারীতে-
যাপিত বহন দহন
সুরহীন বিলাপ বর্ণে।

অথচ-
গান হবো বলেই
আমি স্বরলিপি, তুমুল ঢেউ ভাঙ্গার সুর!
পুনশ্চঃ-
তুমি শুনবে ভেবেই
বাঁধি আত্মলিপি, অরণ্যে বহুদূর।(শিললিপি-গোপী­ সাহ।)।

গোপী সাহার জীবনবীণায় জগৎ ও জীবনের গভীর ধ্যান ও অনিত্য জীবনে চিরন্তনের লীলা, বৈচিত্র্যময় শিল্পবোধ, স্বতস্ফুর্ত আর আবেগস্নাত অভিব্যক্তিরই বহিঃপ্রকাশ শিলালিপি । দুই বাংলার সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অঙ্গণে তিনি সবার প্রিয়ভাজন। কাব্যময় জীবনে হাস্যোজ্জ্বল তারুণ্যের প্রতীক গোপী সাহা।জন্ম ১৯৭৩ সালের অক্টোবরে সিরাজগঞ্জ শহরে।পিতা গৌর সাহা ও মাতা কণা সাহা।চার ভাই বোনের মধ্যে তৃতীয়।সহধর্মিনী জয়া সাহা। একমাত্র ছেলে সোহেল সাহা জেমস। পরিবার থেকেই শিল্প-সাহিত্য চর্চা এবং ছোটবেলা থেকেই সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলে বড় হয়েছেন। ঠাকুরদাদা প্রয়াত মহেন্দ্রলাল সাহা সিরাজগঞ্জ শহরের নিজ বাড়ির কাছেই লক্ষীপূজোয় মাসব্যাপী মেলার আয়োজন করতেন।মেলায় গানের আসর বসতো।সেই মেলায় চারণ কবি মুকুন্দ দাস একাধিকবার সংগীত পরিবেশন করেছেন বলে অবগত করেন তাঁর ছোট ভাই গৌতম সাহা।
গোপী সাহা তাঁর জীবনের অন্তর্গত নেশায় শুধুই একজন শব্দশিল্পী ও কারিগর। তিনি কখনো কখনো প্রিয় দীপ ছদ্মনামে লেখেন। প্রায় এক দশকেরও অধিক সময় ধরে একটি জনপ্রিয় ওয়েব ম্যাগাজিন প্রকাশ করে আসছেন।এই জনপ্রিয় মাসিক ওয়েব ম্যাগাজিনটি তাঁরই সম্পাদনায় ইতোমধ্যে লেখক-পাঠক প্রশংসাধন্য হয়ে মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে । দুই বাংলার কবি সাহিত্যিকদের লেখাগুলোকে একত্রিত করে পাঠকের সামনে হাজির করে পত্রিকাটি। তিনি প্রচ্ছদ, বর্ণসজ্জা, ভাষার বুনট, রূপ,রস ও রঙে পূর্বের সংখ্যার আবেষ্টনীকে ভেঙ্গে শব্দের মিছিলে এক নবতর প্রকাশের মধ্য দিয়ে নানা বৈচিত্র্যে পত্রিকাটি প্রকাশ করে চলেছেন।পত্রিকাটির বিভিন্ন সংখ্যায় চিত্রকল্প ও প্রচ্ছদ নির্বাচনে তিনি এক অসাধারণ কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছেন । সাহিত্য মানে সুসজ্জিত শব্দের বিন্যাস ও শব্দের খেলা। এটা এতটাই স্বতস্ফুর্ত আর আবেগস্নাত অভিব্যক্তি যে যার মাধ্যমে অভিজ্ঞতার মূল নির্যাসটুকু শুধু পাঠক ও শ্রোতাচিত্তকে ছুঁয়ে যায় না, হৃদয় গহীন অরণ্যের অন্তরআত্মাকে আলোকিত ও আন্দেলিত করে তোলে।নিত্য নতুনের বৈচিত্র্যময় শিল্পবোধ শব্দ পাঠক ও শ্রোতাচিত্তে স্পর্শ, অনভিজ্ঞ ও অপ্রত্যাশিত আনন্দ বেদনা মুখরিত অন্তর ধ্বনি সৃষ্টি করে। সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও কবি মানসের এই পরিবর্তনশীল বৈচিত্র্যের প্রবনতাই তাঁর সৃষ্টিশীলতাকে এক নতুন মাত্রা দিয়েছে। কবিতা, ছোটগল্প ও প্রবন্ধ যাচাই বাছাইয়ের ক্ষেত্রেও তাঁর ধৈর্য্য, গভীর মনোযোগ, দৃষ্টির তীক্ষèতা লক্ষ্য করা যায়। তিনি অন্যের লেখাকে প্রাধান্য দেন বেশি। কবিতা ও লেখা বাছাইয়ে ছন্দ, উপমা, অলংকার, চিত্রকল্প, রূপকল্প, শব্দচয়ন প্রভৃতিকে বিশেষ গুরুত্ব দেন। আর ভাষা, ভাষার বুনট, রূপ, রস, অলংকার, পটভূমি, বিষয়বস্তু, রচনাশৈলী ও প্রকাশভঙ্গীতে পাঠকের চিত্তকে ছুঁয়ে যাওয়ার মতো আবেদন সৃষ্টি করতে পারে এমন লেখাকে তিনি গুরুত্বের সহিত বিবেচনা করেন। দুই বাংলার অনেক প্রতিথযশা ও স্বনামধন্য লেখকদের পাশাপাশি তরুণ লেখকদের শব্দের মিছিলে হাত পাকাবার এক অনন্য মাসিক ওয়েব পত্রিকা, বলা যায় কবি ও লেখকদের মিলন মেলা । পত্রিকাটি সৃষ্টিশীল নতুন লেখিয়েদের উৎসাহ, উদ্দীপনা ও প্রেরণা যুগিয়ে চলেছেন দিনের পর দিন। গভীর শিল্পবোধ, সজীব সজাগ দৃষ্টি, স্থির নির্ভুল বিষয় চেতনা এবং প্রকৃতির নানা বৈচিত্র্যের সাথে ঘনিষ্ট সংযোগ সমস্তই কবি গোপী সাহার মনোজগতকে আলোকিত করেছে। কবির ভেতরে রয়েছে যেমনি শিল্পবোধ তেমনি আছে দায়বদ্ধতা। তাই কবি মানুষের পক্ষে শান্তি ও সমপ্রীতির সমর্থক। শিল্প-সাহিত্য স্বাধীন চিন্তার ফসল হলেও তা হবে যেমন নান্দনিক, তেমনি মানুষ, প্রকৃতি আর প্রেমময় সময়ের প্রতিচ্ছবি।