রঙের জীবন

দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক আর্থিক প্রতিবেদন : ৫ হাজার কোটি রুপি লোকসানে ভোডাফোন আইডিয়া লিমিটেড

মাহবুব হাসান:ভোডাফোন ইন্ডিয়া ও আইডিয়া সেলুলার একীভূত হয়ে ভারতের টেলিযোগাযোগ খাতে ‘ভোডাফোন আইডিয়া লিমিটেড’ নামে কার্যক্রম শুরুর পর দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক (অক্টোবর-ডিসেম্বর) আর্থিক খতিয়ান প্রকাশ করেছে। গত বুধবার প্রকাশিত এ আর্থিক প্রতিবেদনে লোকসানের তথ্য জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিবেদনে কর পরিশোধ-পরবর্তী ৫ হাজার কোটি রুপি লোকসানের কথা বলা হয়েছে। খবর রয়টার্স।

গত বছর ৩১ আগস্ট আইডিয়া সেলুলারের সঙ্গে ভারতীয় কার্যক্রম একীভূত করে ভোডাফোন ইন্ডিয়া। সে সময় উভয় প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২ হাজার ৩০০ কোটি ডলারের একটি চুক্তি হয়। এরপর দুই প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে সৃষ্ট নতুন সেলফোন অপারেটর ভোডাফোন আইডিয়া নামে কার্যক্রম শুরু করে। কার্যক্রম একীভূতকরণের পর প্রথম ত্রৈমাসিক (জুলাই-সেপ্টেম্বর) আর্থিক খতিয়ানে ৪ হাজার ৯৭৪ কোটি রুপি নিট লোকসানের কথা বলা হয়। তবে ওই প্রতিবেদনে ৩১ আগস্ট থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যবসার খতিয়ান দেয়া হয়েছিল। জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে গ্রাহকপ্রতি রাজস্ব ৮৮ রুপিতে দাঁড়ানোর তথ্য দেয়া হয়, যা আগের প্রান্তিকের চেয়ে ৪ দশমিক ৫ শতাংশ কম। অবশ্য দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক আর্থিক প্রতিবেদনে প্রত্যাশার চেয়ে কম লোকসান হয়েছে প্রতিষ্ঠানটির। বিশ্লেষকদের পক্ষ থেকে অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে ভোডাফোন আইডিয়া লিমিটেডের নিট লোকসান ৫ হাজার ২৫০ কোটি রুপিতে পৌঁছানোর পূর্বাভাস দেয়া হয়েছিল।

২০১৬ সালে ভারতের ক্রমবর্ধমান টেলিযোগাযোগ খাতে এশিয়ার অন্যতম ধনী ব্যক্তি মুকেশ আম্বানি নিয়ন্ত্রিত রিলায়েন্স জিও ইনফোকমের প্রবেশের পর তীব্র প্রতিযোগিতার সৃষ্টি হয়। জিওর বিনামূল্যের নানা সেবার কারণে প্রতিদ্বন্দ্বী সেলফোন অপারেটরগুলো তাদের সেবার মূল্য কমাতে বাধ্য হয়। তীব্র প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে কয়েকটি সেলফোন অপারেটর কার্যক্রম একীভূত করে। টেলিনর ইন্ডিয়াসহ কিছু অপারেটর ব্যবসা গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয়।

ভারতের টেলিযোগাযোগ খাতে তীব্র প্রতিযোগিতার কারণে গ্রাহকপ্রতি গড় রাজস্ব কমেছে। একই সঙ্গে কার্যক্রম পরিচালনাকারী অপারেটরদের ঋণের বোঝা বেড়েই চলেছে। গত বছর শেষ প্রান্তিকে রিলায়েন্স জিও ইনফোকম ৬৫ শতাংশ মুনাফা প্রবৃদ্ধির তথ্য দিয়েছে। দেশটির টেলিযোগাযোগ খাতে দীর্ঘদিন একচ্ছত্র আধিপত্য বজায় রাখা ভারতী এয়ারটেল ৭২ শতাংশ মুনাফা কমার তথ্য জানিয়েছে।

চলতি বছরের শুরুর দিকে নেটওয়ার্ক একীভূত করার কাজে ব্যস্ত সময় কাটানোর তথ্য জানিয়েছিল ভোডাফোন আইডিয়া লিমিটেড। একই সঙ্গে ভেন্ডর ঠিক করার পাশাপাশি স্পেকট্রাম একীভূতকরণের কার্যক্রম শুরুর তথ্য দেয়া হয়েছিল। ভোডাফোন আইডিয়ার পরিচালনা পর্ষদ এরই মধ্যে কোম্পানির মূলধন বাড়িয়ে ২৫ হাজার কোটি রুপিতে নিতে একটি কমিটি গঠন করেছে। প্রমোটার অংশীদার ও ভোডাফোন গ্রুপ এবং আদিত্য বিড়লা গ্রুপের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ভোডাফোন আইডিয়া লিমিটেডের মূলধন বাড়াতে তারা যথাক্রমে সর্বোচ্চ ১১ হাজার কোটি ও ৭ হাজার ২৫০ কোটি রুপি বিনিয়োগ করবে।

গত নভেম্বরের হিসাব অনুযায়ী, ভারতের টেলিযোগাযোগ খাতে ভোডাফোন আইডিয়া লিমিটেডের সক্রিয় গ্রাহক ৪২ কোটি ১০ লাখে পৌঁছেছে এবং দেশটির টেলিযোগাযোগ খাতের রাজস্বে নতুন অপারেটরটির দখল ৩৫ দশমিক ৯৪ শতাংশে পৌঁছেছে। গ্রাহক সংখ্যা বিবেচনায় নতুন কোম্পানিটি এখন ভারতের সর্ববৃহৎ সেলফোন অপারেটর।

ভারতী এয়ারটেল ও রিলায়েন্স জিওর সঙ্গে প্রতিযোগিতা জোরদার এবং নতুন গ্রাহক টানতে আগ্রাসী ব্যবসা কৌশল অবলম্বন করছে ভোডাফোন আইডিয়া লিমিটেড। এরই মধ্যে খুচরা বিক্রেতাদের জন্য প্রণোদনা দ্বিগুণ করার পরিকল্পনা ঘোষণা দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। খুচরা বিক্রেতাদের নতুন গ্রাহকপ্রতি ১৮০ থেকে সর্বোচ্চ ২৫০ রুপি প্রণোদনা দেয়ার তথ্য জানানো হয়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, দুই সেলফোন অপারেটরের কার্যক্রম একীভূতকরণের মাধ্যমে সৃষ্ট নতুন অপারেটর ভোডাফোন আইডিয়া লিমিটেডের কার্যক্রম শুরু হয়েছে অল্প দিন হয়। এখনই প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক খতিয়ান দেখে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। কারণ তাদের কার্যক্রম একীভূতকরণের পর নেটওয়ার্ক ও স্পেকট্রাম সমন্বয়ে বাড়তি ব্যয় গুনতে হচ্ছে।