রঙের জীবন

সময়-অসময় || শফিকুল ইসলাম শফিক

-কীরে মাখন, তুই এখনও বিছানা থেকেউঠিসনি?
-না, বাবা। আজ স্কুলে যাব না।
-স্কুলে না গেলে আমার সঙ্গে মাঠে চল্।একটা কিছু কর্। মাঠে অনেক কাজ পড়ে আছে।এভাবে আমাকে আর বিরক্ত করিসনা,তোর জ্বালা আর সইতে পারি না।
-আচ্ছা বাবা, স্কুলেই যাচ্ছি। এখন তুমি মাঠে যাও।

বাবার কথাগুলো কানে না ঢুকলে মাখনের ঘুম ভাঙ্গে না। হাতমুখ ধুয়ে শিগগিরই স্কুলেযায়।সে প্রখর মেধাবী ছাত্র। ডানপিটেও বটে। তবে মাঝে মধ্যে ক্লাস ফাঁকি না দিলে তার ভাল্লাগে না।

 

মাখন শ্রেণিকক্ষে প্রায়ই অনুপস্থিত থাকে।সে কোথায় থাকে? এমন প্রশ্ন স্কুলের ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকদের মাথায় ঘোর-প্যাঁচ খেলে। সময়মতো বাড়ি থেকে স্কুলে আসে।এমনকি সময়মতো আবার বাড়িতে যায়।কী ব্যাপার! তাকে স্কুলে তেমন দেখা যায় না কেন? একদিন সবাই জানতে পারল যে,স্কুলের কিছু দূরে একটি মস্ত বড় বটগাছ।মাখন বইখাতা জামার মধ্যে লুকিয়ে গাছেউঠে বসে থাকে। স্কুল ছুটি দিলে আবার ছাত্রছাত্রী আসার আগেই গাছ থেকে নেমে তাদের সঙ্গে বাড়ি যায়। অনেক শিক্ষক তাকে বকেছে, মেরেছে। তবু সে কারও কথাকানে ধরে না। বিষয়টি একদিন মা-বাবার কানে যায়। মাখন বলল, পড়তে আমার ভাল্লাগে না। মনে যা খুশি, তাই করি। দিনবদলে, সে বদলে না।

 

ইতরামি করে কিছুদিন পর মাখন পড়াশোনা ছেড়েই দিল। এভাবে কেটে গেলবেশ কয়েক বছর। মাখন সংসারের কাজও করে না। সময়মতো খায় না। সময়মতো বাড়ি ফিরে না। পাড়ার দস্যি ছেলেদের সঙ্গে মিশল। অন্তরালে সে তাস খেলার নেশায় জড়িয়ে পড়ল। অনেক টাকা-পয়সা গচ্চাদিল। মাখনের বাবা খুব দুঃসাহসী ছিলেন।বাড়িতে একদিন হঠাৎ রাত্রিবেলায় কুখ্যাত ডাকাত দল পড়ল। তার বাবা জান-প্রাণ দিয়ে লড়তে গিয়ে ডাকাতের ছুড়িতে প্রাণ হারালেন। এরপর সংসারের অল্প বয়সেই তাকে সংসারের হাল ধরতে হয়েছে।

 

মাখনের দুই মা। অনেক বড় সংসার। সেপ্রথম মায়ের বড় ছেলে। মা ভাবলেন, তাকে বিয়ে দিলে হয়তো সব পাগলামি বন্ধ হবে।খুব ধুমধাম করে ছেলের বিয়ে দিলেন।বিয়ের পরও সে তার স্ত্রীর অগোচোরে তাস খেলায় মত্ত থাকে। সারাদিন বাড়িতে থাকেনা। অভাবে স্বভাব নষ্ট। তাস খেলে সব জমাজমি বন্ধক রাখে। গোপনে অনেকের কাছে টাকা ধার নিয়ে খেলে। তবু খেলা বন্ধহয় না। একদিন কিছু অপরিচিত কিছু লোক মাখনের বাড়ি এল। তার স্ত্রীকে বলল, তোমার স্বামী কি এই বাড়ি বিক্রি করবে? আমাদের কাছে বিক্রি করতে চায়।’

অতঃপর মাখনের স্ত্রী লোকদের শিগগিরই খুব ধমক দিয়ে বাড়ি থেকে চলে যেতে বললেন। মাখন বাড়িতে এলে তার স্ত্রী সবকিছু জিজ্ঞেস করল। মাখন এবার হাতে-নাতে ধরা পড়ল। তার স্ত্রী বলল, তুমি যদিআর কোনোদিন তাস খেলতে যাও, তাহলে আমি আর এই বাড়িতে থাকব না। মাখন তার স্ত্রীর কাছে শপথ করল, সে জীবনে আর কোনোদিন তাস খেলবে না।’

 

অবশেষে মাখন ব্যবসা করার সিদ্ধান্ত নিল।তার স্ত্রী তাকে ব্যবসার জন্য সব টাকার ব্যবস্থা করল। এক সময় ব্যবসার মাধ্যমে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। সংসারে আর কোনো অভাব নেই। এক ছেলে, দুই মেয়ে।ইচ্ছে থাকলেও মেয়েদের বেশি দূরপড়াশোনা করাতে পারেনি। দেখে-শুনেমেয়েদের বিয়ে দিয়েছে। একমাত্র ছেলে কলেজে পড়ছে। ছেলে প্রতিষ্ঠিত হতে চায়।মাখন এখন ভাবে ব্যবসার চেয়ে আর কিছুতে এত শান্তি নাই। ক্যান যে আগে বুঝেনি! পাপিষ্ঠ অন্তরের জন্য বারবার অনুশোচনা করে। ভুরি ভুরি অর্থ-সম্পদ নাথাকলেও আজ সে সুখী।