মা-বাবার পরিচয়হীন মেয়ে নাফিসা। কোথায় কখন জন্ম সে খবর জানতে সদা ব্যাকুল থাকে। মনের অজান্তে প্রশ্নগুলো সারাবেলা ঘোর-প্যাচ খেলে। কেউ জিজ্ঞেস করলে সোজাসুজি বলে দেয়, ‘আমার মা-বাবা দুজনই আছে। তারা খুব ভালোবাসে। খুব আদর-যত্ন করে।’
খুব শান্তশিষ্ট স্বভাবের মেয়ে নাফিসা। এখন তার বারো বছর পূর্ণ হয়েছে। প্রখর মেধাবী ছাত্রী। সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। জীবন বৃত্তান্ত নিয়ে স্কুল বা পাড়ার যে কেউ প্রশ্ন তোলে। আশ্রিত মা-বাবাকেই আসল মা-বাবা জানে। দিনে দিনে বড় হয়। এখন সে তার আসল পরিচয় জানতে চায়। এতদিন কাকে মা-মাবা জেনেছে? কে তার আসল মা-বাবা?
আশ্রিত মা-বাবা বিষয়টি আর কিছুতেই গোপন রাখতে পারলেন না। মেয়েকে একদিন তার সব জীবন বৃত্তান্ত জানিয়ে দিলেন। বললেন, ‘আমরা নিঃসন্তান। আমাদের কোনো সন্তান ছিল না। আমরা একটি সন্তানের জন্য অত্যন্ত পাগলপারা ছিলাম। যে কোনো কিছুর বিনিময়ে একটি সন্তান অনেক খোঁজাখুঁজি করলাম। কোত্থাও পেলাম না। পাশের গ্রামে একদিন তোমার মায়ের সঙ্গে অনেক কথা হলো।
তিনি বললেন, ‘আমার তিনটি মেয়ে। তার বাবা হঠাৎ একদিন আরেকটা বিয়ে করে কোথায় যেন পালিয়ে গেছে। আজও তার কোনো খোঁজখবর পাইনি। সেই থেকে লোকের বাড়ি বাড়ি কাজ করে ওদের একাই মানুষ করছি। অল্প টাকা উপার্জন করি। সংসার ভালোভাবে চলে না। বিপদে-আপদে পাড়াপড়শি এগিয়ে আসেন। এক বাড়িতে কাজ করি। ওরা টাকা দেয়, খেতেও দেয়। এভাবে দিন চলে যায়।
‘মেয়েরা বিভিন্ন ক্লাসে পড়ে। এক বাড়িতে কাজ করি, তারা কাজের জন্য আমাকে খুব ভালোবাসেন। মাঝে মধ্যে মেয়েদের জন্য নতুন-পুরনো কাপড় দেন। সব আবদার পূরণ করতে পারি না। এমনকি কখনো কখনো খেতেও দিতে পারি না।’
অতঃপর তোমার মা তোমাকে আমাদের কাছে তুলে দিলেন। বললেন, ‘একটা শর্ত আছে- কখনো বাপের পরিচয় দিতে পারবেন না।’ সেই থেকে আজ অবধি তোমাকে লালন-পালন করছি। তোমার নামটা আমরাই পরিবর্তন করেছি। সবার কাছে আপন মেয়ে বলেই পরিচয় দিচ্ছি। কিছুদিন পর জানতে পারলাম, তোমার মা আর গ্রামে থাকে না। তারপর কেটে গেল বেশ কয়েক বছর। আর কোনো খবর পাইনি, দেখাও হয়নি।
নাফিসা ভাবে- একদিন তার আসল মায়ের সঙ্গে তার দেখা হবে। তার মা তো কোনো অপরাধ করেনি। অপরাধ করেছে তার বাবা। কী করে আপন মেয়েকে ফেলে যায়? কেনই বা জন্ম দিলেন? অভাবের কশাঘাতে যে কারো মা মেয়েকে কারো কাছে তুলে দিতে পারেন। নাফিসা মায়ের জন্য প্রার্থনা করে। সব সময় মায়ের জন্য ভালো কিছু প্রত্যাশা করে। সে এখন অনেক বড় হয়েছে। হয়তো তার মা শিগগিরই ফিরে আসবে। একটিবার হলেও মায়ের মুখ দেখতে চায়। ভাবনায় কেটে যায় প্রতিক্ষণ!
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
কনইল, ভীমপুর, নওগাঁ।
[email protected]
আপনার মন্তব্য লিখুন