জীবনের গল্প রঙের জীবন

ভুল উপাখ্যান…

ভুল সময়ে জন্ম আমার, একটা ভুলবশত আমার আগমন, যা অপ্রত্যাশিত ভুল ছিল…

মা প্রতিনিয়ত পিল খাচ্ছিলেন অভাবী এ সংসারে যাতে আর নতুন মুখ না আসে। নাহ তা আর হল কই সেখানেও ভুল। মা পিল খাওয়ায় অনিয়ম করে ফেললেন সেই ভুলের খেসারত হিসাবে এই আমি। যদিও এই ভুলের জন্য মাকে অনেক গালাগালি হজম করতে হয়েছিল। মায়ের গর্ভেও ছিলাম ভুল পজিশনে একদম ঠিক উল্টো হয়ে।

আমাকে নিঃশেষ করার কথা ছিল কিন্তু ঐ যে বললাম ভুল! এই ভুলটাই বাধ সাধল খুব করে তাই আবার ও ভুল। মা যথাসময়ে গর্ভপাতের পিল টাও নিয়েছিল সেখানেও ভুল আসলটা না খেয়ে নকলটা খেয়েছে। কি মারাত্মক রকমের ভুল? এত সুন্দর স্পষ্ট করে বাবা মাকে বলেছিল ছোট প্যাকেট টার ঔষধ খেতে কিন্তু মা নাকি শুনেছিল ভুল।

তারপর গ্রামের হাতুড়ে ডাক্তার মা কে ভালোভাবে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে বললেন সামনের সপ্তাহে আমি পৃথিবীতে আসছি কিন্তু জানেন কি সে হিসাবটাও হয়ে গেলো ভুল। দুই দিন পরেই সমস্ত হিসাবের জট পাকিয়ে ভুল তারিখে আমার আগমন। ভোর পেরিয়ে সকাল অতঃপর আমি আসলাম কিন্তু কি আশ্চর্যের ব্যাপার জানেন সেখানেও ভুল আমি নাকি কোন কান্নাকাটিই করিনি, কি আজব কথা তাইনা?

ধাইমা যখন আমার নাড়ি কাঁটতে গেলো তখনো ভুল, চকচকানো ব্লেড ছেড়ে ভোঁতা ব্লেডটাই চালিয়ে দিল কি ডাকাতি করেছিল আমার সাথে দেখেছেন। তবে ভাগ্যিস ভুল করে ইয়ে করে দেইনি। বহু পেরেশানির পর বাবা যখন মধু না পেয়ে শেষ সম্বল দুইটাকা দিয়ে চিনি এনেছিল আমার মুখে দেবার জন্য সেখানেও ভুল। আমার নানী চিনি না দিয়ে ভুলবশত লবণ খাওয়ায় দিল।
::
তারপর বহুদিন এই ভুলে ভুলেই কেটে গেলো। প্রথম শ্রেণীতে ভর্তি করা হল, বেশ চলছিলো দিনযাপন। ক্লাসের টেবিলে মাথা দিয়ে বিশ্রাম করছিলাম পিছন দিকে হেড স্যার এসে কান মলিয়ে দিল জানেন সেখানেও ভুল করে বসলাম।

আমি বন্ধু আনিস ভেবে দিলাম বেশ অশ্রাব্য ভাষায় কিছু গালি শুনিয়ে। বিনিময়ে সবার সামনে টেবিলে কান ধরে দাঁড়ালাম জানেন সেখানেও ভুল, বেঞ্চের একটি খুঁটি যে ভাঙ্গা ছিল তাই ধপাস করে পড়ে গেলাম। কি আশ্চর্য তারপরের কাহিনাটাও যে ভুল যেখানে সবাই হো হো করে হাসার কথা ছিল কিন্তু না কেউ হাসছেনা সেখানেও ভুল।

যথারীতি বার্ষিক পরীক্ষার রেজাল্ট হল জানেন সেখানেও ভুল,ক্লাসের সব থেকে ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট নাকি এক বিষয়ে ফেইল। বাবার উত্তমমধ্যম খেতে আর দেরী হলনা। পরের ইতিহাসেও ভুল ঘন্টা দুয়েক পর খবর এলো সেই ফেইল করা স্টুডেন্টই নাকি ক্লাসে প্রথম হয়েছে, আমি নিশ্চিত সেখানেও ভুল।

এই ভুলে ভুলে আর ও দু বছর কেটে গেলো। তখন আমি ক্লাস থ্রির স্টুডেন্ট জানেন সবাইকে অবাক করে দিয়ে বাবা এবার কঠিন একটা ভুল কাজ করে বসলেন। যদিও এর পিছনে পরিবারের দারিদ্র্যটাই মূখ্য ছিল। আমাকে ক্লাস সিক্সে ভর্তি করানো হল ভুলে ভুলে এখন আমি হাই স্কুলের ভুল স্টুডেন্ট। সব থেকে জঘন্যতম ভুলটা বুঝি সেবারই হল বছর শেষে রেজাল্ট ঘোষণায় আমার অবস্থান তৃতীয়। বাহ বেশ ভাল তো এই ভুলে ভুলেই যদি এত ভাল রেজাল্ট করা যায় তাতে বৈকি মন্দ হয়না।
::
জানেন তো এভাবেই বছরের পর বছর চলে যায় আর আমার ভুলের মাত্রাটাও বেড়ে যায়। বলতে গেলে ভুল আর ভুল, চলতে গেলে ভুল গাইতে গেলে ভুল খাইতে গেলে ভুল, চাইতে গেলে ভুল, ভুল কথাটাও ভুল, খারাপটাও ভুল আমার ভাল কথাটাও ভুল। সবকিছুতেই এই ভুল শব্দটা ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে আছে।

আজো আমি মানুষ টা ভুল, আমি বলি এক মানুষ ভাবে এক সেটাতেও ভুল। ভুলে ভুল জঞ্জালে রূপ নিয়েছে সেখানেও ভুল। এই যে বছরটা শেষ হতে চলল সেটাও একটা ভুল দিয়েই শেষ হল। সব থেকে মজার ভুল কি জানেন এই টাইপিং করার সময়টাও ভুল। শুধু কি সময়টাই ভুল সেটাও নয়? এই টাইপিংটা করতে গিয়ে বানানটাও ভুল।

#নিচু তলার উকিল