জীবনের গল্প রঙের জীবন

বাদামওয়ালা-৮

অভাবে নাকি স্বভাব নষ্ট হয়, হ্যাঁ হয়তো তবে এটা ততটা ভয়ংকর নয় যতটা স্বভাবের ফেরে ভিতরকার স্বভাবটা নষ্ট হয়ে যায়। শকুনের দৃষ্টি সব সময় নিচের দিকেই থাকে খুবই ধূর্ত আর সুযোগ সন্ধানী প্রাণীও বটে তবু কিন্তু এরা অভাবের তাড়নায় নয় এরা স্বভাবজাত ধূর্ত আর সুযোগ সন্ধানী তবুও এরা একটি গোত্রের সমাজবদ্ধ প্রাণী ।

এদেরও ঘুম পায় খিদা লাগে অবসাদ গ্রস্থ হয় একটানা ক্লান্তিতে হাপিয়ে উঠে ছায়ায় বিশ্রাম নেয় মুক্ত স্বাধীন চলে এদেরও দুঃখ আছে বিসর্জনের বুক ভাঙা কষ্ট আছে, স্বপ্ন দেখে বেঁচে থাকার দুর্নিবার স্বাদ জাগে।

হৃদয়ে তবু ও এদের গান আসে সুখের দিনে নাচতে পারে, মানুষদের মতো জৈবিক চাহিদা আছে, অবাধে মেলামেশা আর প্রেম আসে যা খুবই অশালীন। এরাও মা হয় বাবা হয় সন্তান লালনপালন করে তথাপি কিন্তু এদের জীবনের সাথে মানুষের ঠিক কোথায় জানি কিছুটা মিল আর অমিল খুঁজে পাওয়া যায়।
::
দুপুর ১ টা, প্রচণ্ড রকমের খিদা পেয়েছে। আর রুমে কোন বাজার সদাইও নেই তাই অগ্যতা ছুটে চললাম বাজারের দিকে। খুচরা তরিতরকারি কেনাবেচার দুটি আলাদা জায়গা আছে যেখানে আধুনিক এ সভ্যতায় আমরা মানুষদের কে ভাগ করে দেয় আপনা আপনি।

উচ্চাভিলাষী আর সমাজের উচ্চস্তরের মানুষদের জন্য কেনাকাটার স্থানটি বেশ জাঁকজমকপূর্ণ সেখানে আমার/আমাদের মত দিন এনে দিন খাওয়া মানুষ গুলোর জন্য অমানানসই। এরাজ্যে আমাদের কোন মূল্য নেই। ঐসব বাজারের ধারেকাছে যাওয়াটাও এক ধরণের সংকোচবোধ কাজ করে তবুও তো আমরা মানুষ সেই জায়গায় যাওয়ার অধিকার আমাদেরও আছে।

তবে ওখানকার খুচরা ব্যবসায়ীরাও নেহায়েত ভুলে যায় ওরাও অভাবী মানুষ উঁচুতলায় দোকান নিয়ে ব্যবসা করছে বলে ওরাও সমাজের এলিট পার্সন ভাববে তা কিন্তু অমূলকই বটে। তবে এটা ভাববারও যে অধিকার তাদের আছে। তবে সোনার স্পর্শে থাকলেই যে সোনা হয়ে যাওয়া যায়না তা আমরা বেমালুম ভুলে যাই। নিজেকে জাহির করি ভিন্ন রূপে।
::
বেশ একটা শোরগোল বেঁধে গেছে।এক কেজি পটল চল্লিশ টাকা সে হিসাবে আধাকেজি মাপতে বলতেই দোকানদার বেশ চটে গেল। উনি আধা কেজি বিক্রি করবেন না, কিন্তু কেন উনি আধা কেজি বিক্রি করবেন না তার কৈফিয়ত জানতে চাচ্ছি বার বার।

না উনিও নাছোড়বান্দা কোন ভাবেই আমার কাছে বিক্রি করবেন না। আমি এত করে বুঝানোর চেষ্টা করলাম দাদাভাই আমি একলা মানুষ একাই রান্না করে খাই এক কেজি নিলে সেগুলো যথাসময়ে খেয়ে সাবাড় করতে পারবনা তাই আমাকে আধা কেজি দিন। না দিয়ে বরঞ্চ আমার মুখের উপর বলে দিল ফকিন্নির মতো আমার স্বভাব।

বেশ তো ঠিকই বলেছেন উনি আসলেই তো আমি আমরা অভাবের দোষে দুষ্ট হয়ে আজ স্বভাব নষ্ট করে ফকিন্নিদের মতো চালচলন শুরু করে দিয়েছি। উনি কখনই বুঝার চেষ্টা করলনা উনিও একজন পেটের দায়ে এই জায়গায় এসে আশ্রয় নেয়া আর এক অভাবী মানুষ তবু ওরা ভুলে যায় ক্ষণিকের জন্য আমরাও মানুষ… অমানুষ নই হয়তবা স্বভাবে একটু ফকিন্নি রূপ এইতো পার্থক্য।

রাগে দুঃখে ক্ষোভে বেড়িয়ে এলাম। পিছনে একবার তাকিয়ে দেখলাম ওরা হাসছে। একজনের হেনস্থায় যে বাঙালীরা এভাবেই হেসে থাকে তা জীবনে চলার পথে বহুবার দেখেছি আর ভেবেছি এরাও মানুষ। তবুও কোথায় জানি একটা বিস্তর ফারাক বিদ্যমান।