জীবনের গল্প রঙের জীবন

বাদামওয়ালা-৭

পৃথিবী বন্ধু আমার জন্য নয়, তাই আমি দেউলিয়া রূপ।
তবু অমানুষ বলতে পারেনি কেউ
ওরা থেকেছে নিশ্চুপ।

::
মানুষের জন্য মানুষ, উপকারে মানুষ কল্যানে মানুষ অপকারে মানুষ অসভ্যতায় মানুষ এই মানুষের অবস্থান এবং এদের ক্রিয়াকলাপ পৃথিবীর প্রতিটি আনাচেকানাচে বিদ্যমান। সময়ের ফাঁক ফোকরে এই মানুষ একেকজনের কাছে একেক রূপ প্রকাশ করে।

ভাল মানুষটা কারও দৃষ্টিতে খুব ভাল আবার কারও দৃষ্টিতে খারাপ তবু মানুষ মানুষকে বিশ্বাস করে মাথায় তুলে রাখে আবার বিশ্বাস ভেঙে গেলে মাটিতে নামিয়ে দেয়। এই দেয়া নেয়ার মাঝেও স্বার্থ থাকে স্বার্থ থাকতে হয় বলে থাকে তবুও দিন শেষে আমরা হয়ে যাই সভ্য, অসভ্য, ভাল খারাপ এর সমন্বয়ে মানুষ কিংবা অমানুষ।
::
সাত সকালের বিভোর ঘুমে যখন পৃথিবী ঘুমিয়ে থাকে তখন আমরা কতিপয় যুবক ঘুমহীন চোখে পলিথিনের প্যাকেটে বাদাম ভরাতে ব্যস্ত। এই কয়েকদিনেই আমরা কেমন পারদর্শী হয়ে গেছি। এখন আর বাদাম মেপে মেপে ঢুকাতে হয়না হাতের একটা আন্দাজ চলে এসেছে। অভ্যাস মানুষের দাস, অভ্যাসই পারে মানুষের বহু বছরের কোন অভ্যাস কে পরিবর্তন করতে যা দরকার তা হল শুধু ব্যক্তির ইচ্ছাশক্তি আর ধৈর্য ও পরিশ্রম করার দ্বিগুণ উৎসাহী মনোভাব।

আন্দাজে পরিমাপের এ অভ্যাসটাতে আমাদের কাজের গতি বেড়ে গিয়েছিল। আমার দায়িত্ব ছিল মোমবাতির আগুনে প্যাকেটের শেষ প্রান্ত গুলো জুড়ে দেয়ার। আর ওরা দুইজনেই বাদাম প্যাকেটে ভরতে থাকতো। প্রতিদিনের টার্গেট ছিল তিনশত প্যাকেট রেডী করা।

এদিকে আঁধারের বুক চিঁড়ে পুব আকাশে রক্তিম আভা ছড়িয়ে পড়বে পড়বে ভাব, ওদিক থেকে ফারুকের তাড়া উকিল দ্রুত হাত চালা। জীবন, জীবিকা আর পেটের তাগিদে আমি হাত চালিয়ে যাই প্রাণপাত করে।
::
সকাল ৯ টা,
পৃথিবীর ব্যস্ততা বেড়েই চলছে, নতুন কাজের সন্ধানে এ শহরের বুকে এসে নামছে, হাজারো মানুষ। টাইকোর্ট পড়া ভদ্র মানুষ গুলোর মাঝে একশ্রেণীর মানুষ গুলোকে বেশ আলাদা করে চোখে পড়ে। এরা এ সমাজের অবহেলিত, নির্যাতিত কতিপয় মানুষ।

কাঁধে ঝোলানো ময়লা ব্যাগ পড়নে ছেঁড়া লুঙি, পায়ে রাবারের স্যান্ডেল তবু এরা মানুষ এদেরও একেকটা পরিবার আছে,বুক ভাঙার গল্প আছে পরিজন আর গ্রাম ছেড়ে জনাকীর্ণ এ শহরে আসার হাজারো কারণ আছে।

এরা সুখের দিনে হাসতে পারে দুখের দিনে কাঁদতে পারে অন্যের শোকে সমব্যথী হতে পারে তবুও যেন এদের কোথায় একটা আক্ষেপ থেকে গেছে যা আজো বিদ্যমান তবুও এরা তাতেই সন্তুষ্ট ওখানে সুখ খুঁজে নেয় বড্ড সন্তর্পণে।
::
অন্যান্য দিনের তুলনায় সেদিন বেচা বিক্রি বেশ ভালই হচ্ছিল। আমার ঠোঁটের কোনায় একটা পরিতৃপ্তির হাসি খুবই স্পষ্টত। গুন গুন করে গান গাচ্ছিলাম আর খানিক বাদে এই বাদাম লন বাদাম, একদম মচমচে সুস্বাদু বাদাম বলে ক্রেতার মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করছিলাম….

ঠিক দশ মিনিট পড়ে রাস্তার ওপার থেকে কোর্ট টাই পড়া এক ভদ্র লোক আমার দৃষ্টি আকর্ষণ স্বরূপ হাত ইশারায় কাছে ডাকল। উনি হয়তো বাদাম কিনবেন এই ভেবে এপারে চলে গেলাম, গিয়ে বললাম…
-স্যার কয় প্যাকেট দিব?
– চার প্যাকেট তো নিতে চাচ্ছিলাম, আচ্ছা প্রতি প্যাকেট কত করে রাখবে?
-প্রতি প্যাকেট স্যার দশ টাকা।
-কিছু কম রাখা যাবে।
-না স্যার কম রাখা যাবেনা, কম দিলে আমাদের ব্যবসা টিকবেনা।
-এগুলো কি আজকের ভাজা নাকি বাসি?
-না স্যার এগুলো একদমই আজকের ভোর রাতের ভাজা, একটা নেড়ে দেখুন কেমন কড়মড় কড়মড় করছে।
-আচ্ছা ঠিক আছে দুই প্যাকেট দাও
যথারীতি ওনাকে বিদায় দিয়ে আবার ছুটে চললাম ওদিকে, যেদিকে বাস থেকে লোকজন ওঠানামা করছে।
::
পেট টা বেশ চোঁচোঁ করছে সকালে তেমন কিছুই খাওয়া হয়নি। এখনো প্রায় বিশ প্যাকেট অবিক্রিত রয়ে গেছে এদিকে বেলা বেড়ে বারটা ছুঁইছুঁই।

#নিচু তলার উকিল