জীবনের গল্প রঙের জীবন

বাদামওয়ালা-২

কাক ডাকা ভোর শেষে,উঠে এলো সূর্য
বিষে বিষ তবু,বিষক্ষয় আমি রণ তূর্য…!!

সূর্য উদিত হবার সাথে সাথেই বড় ভাই এসে আমাকে নিয়ে গেল। পঁচা নর্দমার মাঠ পেরিয়ে একটা চিপা গলির মধ্য দিয়ে ঘিঞ্জি বস্তিতে প্রবেশ করলাম। নয় নাম্বার রুমে ঢুকেই আমার দম বন্ধ হবার উপক্রম। চার পাঁচ হাতের রুম সেখানে গাদাগাদি করে আর ও চারজন।

কি শান্তির ঘুম, ঘুমন্ত মুখ গুলো বড় অসহায় লাগে, জীবনের সাতকাহন গুলো বুঝি এভাবেই শুরু হয়ে মধ্য রজনীতে নিরব চোখের জলে ভাসিয়ে নিয়ে যায় কষ্টের পাহাড়। যথারীতি ছোট্ট খুপরি ঘরে ঢুকে গোসল সেরে খেতে বসে গেলাম। মসুরের পাতলা ডাল আর আলুর ভর্তা এ যেন অমৃত নিত্যদিনের ভয়াল সঙ্গী। ঘুম দরকার,অবাধ্য এ চোখ…চোখ টা আজ এত বেশি পোড়ায় কেন?

::

আজ দুই দিন ধরে বসে আছি, বসে থাকাটাও আজকাল বসে থাকার সাথে যুদ্ধ করে প্রতিনিয়ত ঘরে ফিরে হার মানা কোন কাক হয়ে। আমি দাঁড়িয়ে থাকি রোজ পিঁপড়ের দল বেঁধে সারি সারি অভুক্ত লাল নীল স্বপ্নে মোড়া পিঁপড়ের মাঝে। ক্ষুধার্ত পিঁপড়ের তবু ঘরে ফেরার নেই তাড়া।

এ গার্মেন্টস এর দরজা থেকে আর এক গার্মেন্টস এর দরজায় আমি কড়া নাড়ি, সার্টিফিকেট গুলো মূল্যহীন পড়ে রয় ফাইলের চিপায়। অভিজ্ঞতা চাই, জীবনের প্রতিটি পরতে পরতে অভিজ্ঞতা। অভিজ্ঞতা আজ মানবতার আর এক নাম। বাক্সবন্দী হয় আমার স্বপ্নের ডিম, বাচ্চা বেরুবে কবে? পথ জানা নেই মহাকাল আর মহাকালেশ্বর। তবু পথের শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে কথা বলি শূন্যের সাথে, আজগুবি সব আলগোছ কথা।

::

আজো বের হলাম সাথে বাদামওয়ালা রহিম চাচা। পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব তাই চাকুরীর খোঁজ। কয়েক দিনেই বড় আপন হয়ে গেছে উনি বড় সখ্য হয়ে গেছে তার সাথে। স্বপ্ন দেখাই স্বপ্ন দেখি, গল্প বলি প্রেমের দুঃখের, সুখের দেশ আপামর সাধারণ, রাজনীতি নিয়ে।

জোর কদমে পা চলে তবু স্বপ্ন থামেনা, পথ হারায় না স্বপ্নিল পথ। হোচঁট খাই আলগোছভাবে রহিম চাচা হাত ধরে তুলে। বড় ভাই ও কম কিসে? স্বপ্ন দেখায় আর বলে হাল ছাড়িস না এ অবেলায়। আমি আছি তো। সত্যিই তাই বড় ভাই আছে তো।

::

এডমিশনের ফরম পূরণ চলছে এক রকম জোর করিয়ে বন্ধু রমাকান্ত ফরম পূরণ করিয়ে দিল। কোন কোচিং নেই গাইড বই নেই, থাকবে কি করে এক মুঠো ভাত যেখানে দুর্বোধ্য সেখানে কোচিং এর চিন্তা আকাশ কুসুম। আকাশের দিকে তাকিয়ে আমি, আকাশ আমার দিকে… কি যে কথোপকথন? বেদনার বেদীতে শুধুই জলাঞ্জলি আর বিসর্জন।

#নিচু তলার উকিল