ছোট্ট একটি গ্রাম। নাম মংলাপাড়া। গ্রামটি নওগাঁ শহর থেকে ২৪ কি.মি. পূর্বে অবস্থিত। এই গ্রামের মধ্যবিত্ত পরিবারের একটি ছেলে হাফিজুর রহমান। সবাই হাফিজ নামেই চিনে। তাঁর পিতা মৃত বয়তুল্লাহ মণ্ডল ও মাতা মৃতা রুমিছা বেওয়া। মস্ত বড় পরিবার। ছয় ভাই, তিন বোন। বোনেরা ভাইদের বড়। হাফিজ পঞ্চম ভাই।
তিনি খুব মেধাবী ছাত্র। ভদ্রসেনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাইমারি পাশ করেন। এরপর সতীহাট কেটি উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হন। এখানে পাঁচটি বছর শিক্ষা লাভ করেন। অতঃপর ১৯৯৯ সালে এসএসসি পরীক্ষা দেন। কারণবশত পরীক্ষায় অকৃতকার্য হন। পরীক্ষার দুই-তিন মাস পর বাবা ইন্তিকাল করেন। এমন্তাবস্থায় খুবই মর্মাহত হলেন।
এরপর পড়ালেখা ছেড়ে দিলেন। আর পরীক্ষা দিলেন না। হঠাৎ মনের মধ্যে অন্য একটি বাসনা জাগে। সতীহাটের বিখ্যাত ডাক্তার মকবুল হোসেন। তিনি একজন সরকারি ডাক্তার। সতীহাটে তাঁর একটি ফার্মেসি রয়েছে। অবসরে তিনি সেখানেই থাকেন। হাফিজ মকবুল ডাক্তারের কাছে অগ্রসর হন। এখানে তিনি পাঁচটি বছর অতিবাহিত করেন। সেই সুবাদে তিনি বিভিন্ন রোগ এবং ঔষুধ সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা অর্জন করেন।
এরপর নিজেই সতীহাট মসজিদ মার্কেটের পাশে একটি ফার্মেসির দোকান খোলেন। খুব ভাল চিকিৎসা করেন। একজন দক্ষ চিকিৎসক বটে। এলাকার সবার মুখে মুখে রয়েছে তাঁর যথেষ্ট সুনাম। তিনি একজন সৎ, যোগ্য ও মানবদরদি চিকিৎসক। আজীবন নিজেকে মানব সেবায় নিয়োজিত রাখতে চান। অতি সুলভ মূল্যে ঔষুধ বিক্রি করেন এবং অল্প খরচে বিভিন্ন রোগীদের চিকিৎসা করেন।
নিজ ফার্মেসির পাশাপাশি রোগীদের বাড়িতেও চিকিৎসা করেন। এমনকি নিজ বাড়িতেও রোগীগণ চিকিৎসার জন্য আসেন। প্রথমে বেশ কয়েক বছর সাইকেল নিয়ে যাতায়াত করেন। দূর-দূরান্তে যাতায়াতে বিভিন্ন সময়ে অনেক কষ্ট সইতে হয়েছে। এরপর মোটর বাইক নিয়ে যাতায়াত করেন। অনেক কষ্ট এখন লাঘব হয়েছে। এখন সকল এলাকায় ডাক্তার নামেই সমধিক পরিচিত। এলাকার কেউই কোনদিন ডাক্তারের কথা ভুলতে পারবে না।
তিনি মংলাপাড়া, ভদ্রসেনা, নলকুড়ি, দূর্গাপুর, শ্রীরামপুর, গণেশপুর, কচুকুড়ি ইত্যাদি একালায় চিকিৎসা করেন।
তিনি অত্যন্ত সহজ সরল জীবন যাপন করেন। ২০০৮ সালে তিনি গোলাপীর সাথে প্রণয়ে আবদ্ধ হন। দুই মেয়ে। বড় মেয়ে মিম। বয়স চার বছর। ছোট মেয়ে হোমাইরা। বয়স তিন বছর। ছোট্ট একটি সুখের সংসার। বিঘা তিনেক জমি রয়েছে। নিজেও কিছু চাষাবাদ করেন। অবশিষ্ট জমি লোকের কাছে বর্গা চাষের জন্য রাখেন।
তাঁর মা গত বছর এপ্রিল মাসে ইন্তিকাল করেন। মা দীর্ঘদিন যাবৎ অসুস্থ ছিলেন। ডাক্তার নিজেই দীর্ঘদিন মায়ের চিকিৎসা করেন। মাকে সুস্থ করাতে পারলেন না। কারণ, সেটি ছিল জীবনের শেষ অসুখ। এভাবেই মৃত্যু লেখা ছিল কপালে। মায়ের কথা বার বার মনে পড়ে। চিরকাল হয়তো মায়ের জন্য আফসোস থেকেই যাবে।
কনইল, ভীমপুর, নওগাঁ
আপনার মন্তব্য লিখুন