জীবনের গল্প রঙের জীবন

একটি অন্যরকম বিবাহের গল্প | জয়নাল আবেদীন

ভালোবাসার মানুষের জন্যে ত্যাগ স্বীকারের নজির পৃথিবীতে অনেক। কিন্তু আজকের স্বার্থের দুনিয়াতে যিনি ত্যাগের বিরল দৃষ্টান্ত গড়েন, তিনিই খাঁটি মানুষ। তিনিই প্রকৃত ভালোবাসার মানুষ।

একজন রোমানার ভালোবাসা আর ত্যাগের এই গল্প আমাদের আরও বেশি প্রাণিত করবে। এই গল্প কোনো কল্পকাহিনি নয়, বাস্তবের জীবনাখ্যান।

আনোয়ার হোসেন রাজীব। ঊনত্রিশ বছরের এই যুবকই একটি সংসারের আশার প্রদীপ। প্রদীপটি নিভে যাবার অশনিসংকেত এলো হঠাৎ। জানা গেলো, তাঁর দুটো কিডনিই বিকল হয়ে গেছে! দেশের কোনো প্রান্ত থেকে কেউ এসে বলে না যে একটি কিডনি দান করবেন। আবার তাঁদের সামর্থ্যও নেই কিডনি কেনার। হতাশার মহাসমুদ্রে ডুবে যেতে থাকে একটি পরিবারের সমস্ত সুখ-স্বপ্ন।

তাঁরা আশা ছেড়েই দিয়েছিলেন। ট্র্যাজেডির শেষ সময়ে ধূমকেতুর মতো আবির্ভাব ঘটলো এক তরুণীর। এই ধূমকেতুর নাম— রোমানা তাসমিন। তিনি এলেন, কথা দিলেন আর জয় করলেন।

রাজীবের কিডনি নষ্ট— রোমানা খবরটি প্রথমে দেখেন ফেসবুকের একটি পোস্টে। তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। দিন যায়, মাস যায়। রাজীবের কিডনির ব্যবস্থা হয় না। যেন ধীরে ধীরে মৃত্যুর নিকটে ধাবিত হয় একটি স্বপ্নীল জীবন।

ততদিনে বন্ধুত্বের সীমা ছাড়িয়ে দুজনের সম্পর্ক গড়ায় প্রেমে। প্রেমিকের জীবন তিলে তিলে ক্ষয়ে যাবে, কি করে সইবেন এই তরুণী! সাহস করে একদিন বলেই ফেললেন, আমার একটি কিডনি নিয়ে নাও তুমি!

রাজীব বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। আজকের পৃথিবীতে কেউ কারও জন্যে না। অথচ একজন তরুণীই হয়ে উঠলেন রাজীবের জীবনের দূত। যার জীবনটাই নিশ্চিত মৃত্যুর দিকে ধাবমান, তেমন একজন যুবকের জীবনের এই কঠিনতম সময়ে ছেড়ে যাননি রোমানা। উল্টো আগলে ধরেছেন পরম ভালোবাসায়।

নিজের থেকে একটি কিডনি দেবেন। কিন্তু আত্মীয় ছাড়া কারও কিডনি নেবার ক্ষেত্রেও তো আইনগত বাধা আছে। সেখানেই আসল সাহসিকতার পরিচয় দেন রোমানা। রাজীবকে বিয়ের প্রস্তাব দেন নিজে থেকে।

রাজীবের কাছে সবকিছু স্বপ্নের মতো মনে হয়। সব সত্যি তো! হ্যাঁ, রোমানার কোনকিছুই যেন মিথ্যে হতে পারে না। শেষপর্যন্ত তাঁরা আবদ্ধ হলেন জীবনের শুভ পরিণয়ে।

এবার দিন গুনতে থাকেন কবে নতুন জীবনের পথে পা বাড়াবেন রাজীব। কিডনি প্রতিস্থাপনে অনেক টাকার দরকার। রোমানা কেরানীগঞ্জের একটি হাসপাতালের প্যারামেডিক হিসেবে চাকরি করছেন। তাঁর বেতনের টাকায় রাজীবের ডায়ালাইসিস চলছে।

কিডনি প্রতিস্থাপনের টাকা জোগাড় হলে দুজনে চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছাতে পারবেন। কিন্তু কে দেবে এত টাকা? রোমানা আর রাজীবের এই দৃষ্টান্তমূলক জীবন-কাহিনি এখানেই ঝুলে রয়েছে। তাঁরা জানেন না, এই কাহিনির শেষটায় কি অপেক্ষা করছে? আনন্দ, নাকি বেদনা?

আমরা কেউই চাই না এত সুন্দর বাস্তব গল্পটি বেদনায় সমাধি ঘটুক। ভালোবাসার মানুষের জন্যে ত্যাগের আরও কত নজির আছে! কিন্তু রোমানার মনছোঁয়া ভালোবাসা আর ত্যাগ আমাদের অনেক কিছু শিখিয়ে যায়।

রোমানাদের জয় হোক।

» জয়নাল আবেদীন, ৮ জুলাই ২০১৭