মতামত

শুভ্রতার চাদরের মোড়ানো দুই মায়াবিনী মনোহরনী : মোঃ মজনু সরকার

শুভ্রতা সবারই ভালোলাগে। এই শব্দটির মাঝে অদ্ভূত এক মাদকতা রয়েছে। আর এই শুভ্রতা নামের দুই মায়াবিনীর মাদকতা আজ আমাদের হেসেলগুলো পযর্ন্ত পৌঁছে গেছে। তাদের মোহনীয় রুপের মায়াজালে আমাদের ফ্যাশনেবল বৌগুলো আটকে গেছে। ঠোঁটে দেয়া লাল লিপস্টিকের মতো টেস্টবাডগুলো দখল করে নিয়েছে। আমার সবচেয়ে প্রিয় ও শ্রদ্ধেয় একস্যারের মতে, যে দিন থেকে আমাদের বৌগুলো ফ্যাশনেবল হওয়া শুরু করেছে সেদিন থেকেই নাকি শুভ্রতা নামের দুই মায়াবিনী আমাদের হেসেলগুলোসহ মন মগজ দখল করা শুরু করেছে। সময়ের সাথে সাথে আমাদের বৌগুলোও আধুনিক হয়েছে, সেও তার প্রাকৃতিক লাল, কালো, ধূসর, ময়লাটে রুপের খোলস ছেড়ে প্রসাধনীর কড়া মেকাপে সুন্দর থেকে সুন্দর হওয়া শুরু করেছে এবং সার্জারির মাধ্যমে পশ্চিমা মডেলদের মতো লিকলিকে সুন্দরী হওয়ার প্রতিযোগিতায় নেমেছে।

আর বানিজ্যিক কোম্পানিগুলো তাদের ফায়দার জন্য টিভি-মিডিয়াতে সুন্দরী সুন্দরী মডেলদের দিয়ে সত্যমিথ্যার ধুম্রজালে তাদের সৌন্দর্যকে বহুগুন বাড়িয়ে চাদ, সওদাগর, তীর, পালকি, মন, প্রাণ, ফ্রেশ নানান বাহারি নামে ব্র্যান্ডিং করে আমাদের ফ্যাশনেবল বৌদের হাতে তুলে দিচ্ছে। আমরাও তার বার্হিক সৌন্দর্যে বিমোহিত হয়ে অন্তনিহিত গুনাগুনের কথা ভুলে তার মাদকতায় আসক্ত হয়ে পড়ছি। সে আজ আমাদের শিরা-উপশিরায়, রক্ত, মজ্জায় বিরাজ করছে এমনকি আমাদের জীবনীশক্তির চাবিকাঠি নিউরনকে নিয়ন্ত্রণ করছে। দিন দিন তাদের প্রতি আসক্তি বেড়েই চলছে। তাদের অন্ধ প্রেমে হাবুডুবু খেয়ে প্রতিদিনও অসংখ্য মানুষকে হারাচ্ছি, অসংখ্য মানুষ বিকলঙ্গ হচ্ছে, অসংখ্য মানুষ চিরদিনের জন্য অন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তবুও আমাদের আসক্তি কমছে না, পরিবারে-সমাজে তাদের উপস্থিতি কমছে না, তাদের নিয়ে নেই কোন আলোচেনা, নেই কোন মিডিয়াতে মাতামাতি, সুধীজনেরও চুপ, সরকারি-বেসরকারি পযায়ে নেই কোন দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা-পদক্ষেপ। আমরা যেন বড্ড উদাসীন।

আমরা কি পারি না সবাই মিলে একটু কম আধুনিক হতে? পারি না আমাদের বৌগুলোকে একটু সেকেলে করতে? আমরা কি পারি না আমাদের টেষ্টবাডগুলোকে একটু নিয়ন্ত্রণ করতে? হয়ত একটু কম আধুনিক, একটু সেকেলে আর একটু টেষ্টবাড নিয়ন্ত্রণ করার প্রবণতাই আমাদের শুভ্রতা নামের দুই মায়াবিনীর হাত থেকে মুক্তি দিতে পারে। রক্ষা করতে পারে হাজারো মানুষ কে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ক্যান্সার, কিডনি জটিলতা এবং মুটিয়ে যাওয়ার মতো মারাত্বক সব রোগ থেকে। বিভিন্ন পরিসংখানে দেখা গেছে, দেশে বতর্মানে প্রতি ১১জন বয়স্ক মানুষের মধ্যে ১জন ডায়াবেটিসে, প্রতি ৪জন বয়স্ক লোকের মধ্যে ১জন উচ্চ রক্তচাপে, ১৫ লক্ষ লোক ক্যান্সারে, প্রায় ২ কোটি লোক কিডনি জটিলতায়, ১৭ শতাংশ বয়ষ্ক লোক এবং ৪.৫ শতাংশ শিশু মুটিয়ে যাওয়ার (স্থুলতা) মতো মরণব্যধিতে আক্রান্ত। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, এসব রোগে আক্রান্ত হওয়ার অন্যতম কারন অতিরিক্ত হারে শুভ্রতা নামের দুই মায়াবিনীকে আমাদের শরীরের ভিতরে নিয়ে এসে আমাদের রক্তনালিতে তাদের অবাধ বিচরনের সুযোগ করে দেয়া।

লেখক: উপ-ব্যবস্থাপক, পিকেএসএফ।

-জুলাই ২০২১