রাত ২টা, হাসপাতাল থেকে বের হয়ে বাসায় যাব।
পেটে প্রচণ্ড ক্ষিদে, আবার অনেক ক্লান্ত।
প্ল্যান হল, বাসায় যাবার পথে কোন দোকান খোলা থাকলে কিছু কিনে নিয়ে যাব।
তবে, আপাতত ঘুম টাই বেশি দরকার।
বের হলাম, একটাই রিক্সা চালক সিটে বসে আছেন। ইশারা করতেই ছুটে এল।
সাধারণত, এখানকার রিক্সাওয়ালা রা জায়গা পছন্দ হলেই তবে রাজি হন,নইলে বসে থাকবেন কিন্তু যাবেন না।
এবার ব্যতিক্রম ঘঠল,একটু অবাক হলাম।
কিছু না বলে উঠে গেলাম, বললাম টানেন।
পরে, দরদাম অথবা জয়গা নিয়ে আলাপ করলেই রিক্সা হারানোর ভয় আছে, তাই চান্স না দিয়ে ই টানতে বললাম।
ওনাকে, আপাতত একটা গন্তব্য ঠিক করে দিয়ে চালাতে বললাম।
জিজ্ঞেস করলাম,চাচা রাতে ভাড়া কেমন পান?
তিনি বলেন, বাবা আমি ত জানি না।আমি রিক্সা চালাই না।
কৌতুহল বেড়ে গেল।
তিনি বলতে লাগলেন।
তিনি একজন কৃষক, বাড়ি চকরিয়া।
হাসপাতালের সামনে বসে থাকার কারণ, ছেলে নিউমোনিয়া নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি।
বন্যায় ফসল নষ্ট, হাতে টাকা-পয়সা নাই,তাই বাধ্য হয়ে চিকিৎসার খরচ যোগাতে রিক্সা চালাচ্ছেন।
হাসপাতালের সামনে বসে থাকেন, ভাড়া মারেন আবার ওষুধ লাগলে নিয়ে আসেন।
রিক্সা চালিয়েই চিকিৎসার খরচ , আবার ছেলে,স্ত্রী র খাবার খরচ যোগাড় করছেন।
তিনি বলতে লাগলেন
সকালে ঔষুধ আনতে দিসিলো, কিনতে পারে নাই।
ভাড়া মেরে বিকেলে কিনে দিয়ে এসেছেন।
তাই, সারাদিন খাওয়া হয়নি তার।
ততক্ষণে,বাসার গেইটে চলে এসেছি।
বললাম, গাড়ি ঘোরান।
দুজন মিলে চেনা এক হোটেলে গেলাম।
দুই অভুক্ত প্রাণী খুব তৃপ্তি নিয়ে খেলাম, আর ছবি তুল্লাম।
বললাম, কাল হাসপাতালে যাব, যদি কথা সত্যি হয় তবে তার ছেলের দায়ীত্ব আমি নিব।
আর মিথ্যা হলে ছবি ফেইসবুকে দিব, আর বাটপারির কথা বলব।
সারারাত ঘুমাইনি।
সকালে উঠেই গেলাম, শিশু ওয়ার্ডে খুজে বের করলাম ছেলে কে।
দেখলাম, কাহিনী সত্য।
পরের কাহিনী না বলি।
বাবাদের সৃষ্টিকর্তা কি দিয়ে বানাইছে, শুধু তিনিই জানেন।
এরকম কত ত্যাগ করে একজন বাবা হন, সন্তান কখনো ই বুঝে না।
যতদিনে বুঝে, ততদিনে নিজে বাবা হয়ে সন্তানের জন্য ত্যাগ করতে থাকেন।
সব বাবারা ভাল থাকুক।
– Hossen Jahed
আপনার মন্তব্য লিখুন