এইদিকে রাস্তাটা খুব নির্জন। মানুষের আনাগোনা নেই বললেই চলে। রাস্তার পাশেই একটা দোতলা বাড়ি। বাড়িটার বাসিন্দা বলতে একজন সুন্দরী যৌবনা নারী আর একজন বৃদ্ধ মহিলা। আর কাউকে দেখি না।
কম-বয়স্ক মহিলাটাকে দেখলে মনেহয়, হয়তো বিয়ে হয়েছিল, দু’চার বছর সংসার করার ছাপ তার শরীরে। সুন্দরী মহিলাটা প্রায়ই দু’তলার বারান্দায় রেলিং ধরে ঝুকে রাস্তায় তাকিয়ে থাকে। আমি একদিন রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় মহিলাটা আমার দিকে চেয়ে তাঁর শাড়ির আঁচলটা বুক থেকে টেনে ফেলে দিল। আমি তার ব্লাউজ ঢাকা পাকা পেঁপে দুটি দেখেও না দেখার ভান ধরে চলে এলাম। তারপর একদিন দেখি অন্য এক পথচারীর সাথে মহিলাটা এমন আচরণ করছে। পথচারী ছেলেটা মহিলাটার দিকে হা-করে তাকিয়ে আছে আর মহিলাটা তাকে পেছনের দরজা দিয়ে বাসায় ঢুকতে ইশারা দিচ্ছে।
তার আরও কিছুদিন পর অন্য আরেকটি তরুণের সাথে একই ঘটনা। ইশারা পেয়ে ছেলেটি বাসার পেছনের দেওয়াল টপকে ভেতরে ঢুকলো। কিন্তু দুদিন পর দেখি সারা শহরে সেই ছেলেটার ছবি ছাপানো পোস্টার। পোস্টারে লেখা নিখোঁজ সংবাদ। আমার সন্দেহ হল। আমি থানাতে গিয়ে ঘটনাটি বললাম। জিপ ভরা পুলিশ আর গলায় ক্যামেরা ঝোলানো সাংবাদিকে ছেয়ে গেল বাড়িটা। দুদিন পর সংবাদপত্রে সব রহস্য উন্মোচন হলো।
রিমান্ডে নেওয়ার পর সেই সুন্দরীর মহিলা আর বৃদ্ধা সব স্বীকার এসেছেন। তারা নাকি যৌনতার লোভ দেখিয়ে পথচারীদেরকে ঘরে তুলে শরবতের সাথে অজ্ঞান হবার ঔষুধ খাইয়ে অজ্ঞান করতেন। তারপর কিডনি-চক্ষু ইত্যাদি মূল্যবান অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ হাসপাতালে পাচার করতেন। দুটি হাসপাতালের দুজন ডাক্তার ও কিছু নার্স তাদের এই চক্রের সাথে যুক্ত। সংবাদপত্রে এ খবর পড়তে পড়তে আমার গায়ের লোম দাঁড়িয়ে উঠেছিল।
এখনও ওই বাড়িটার সামনে দিয়ে যখন কোথাও যাই, দোতলার সেই বারান্দাটার দিকে তাকিয়ে মনেমনে বলি, আহ কী বিরাট বাঁচার বেঁচে গেলাম। পাকা পেঁপের ফাঁদে পড়ে দেয়াল টপকালে আজ…
হারুয়া, কিশোরগঞ্জ।
আপনার মন্তব্য লিখুন