রঙের জীবন

দেহ স্পর্শ নয় হৃদয় স্পর্শে প্রেম হয় – ২য় পর্ব || ইকরাম মাহমুদ

রূপবতী সোনালীর রূপ দেখে বর তৃষ্ণার্ত অবস্থায়,অধিক পানি পান করেন,কে বা জানে তার এত পিপাসিত হবার কারণ-!

হয়তো অনেকে বুঝে নিতে কষ্ট হবে, তবে হ্যাঁ সোনালী কিন্তু অনেকটা বুঝে নিতে সহজ হয়েছে,তাই মৃদু হাসির মাঝে বুঝিয়ে দিলো,কেননা মেয়েরা তখন অনেক কিছু বুঝে নিতে পারে, যখন কোন পুরুষ অপরিচিত কোন নারী কে দেখার পর যদি পরিবর্তন মনোভাব আসে আচরণে বা তার ভঙ্গিমায়।

যাইহোক বেচারা বর
রূপেরমোহ দেখে বিমুগ্ধে নিজেকে অনেকটা রোগাক্রান্ত করে ফেলেছেন,কিছু পুরুষ এমন ই হয় নারীর বাঁধনে ভীতু ও অবুঝ হয়ে পড়ে,

কিছুক্ষণ পর টুকটাক প্রশ্ন আদান প্রদান করেন,গ্রামের বিবাহ তে যা নিত্য বলে গণ্য, সুন্দর ও সঠিক উত্তর সোনালী দিয়ে সবার মন জয় করে ফেলে,এতে সবাই খুশি বেশ,
পর্যাপ্তসংখ্যক কথোপকথনে পছন্দের ভাব প্রকাশ করেন পাত্রপক্ষ।

()”বর পক্ষের আলাপন”()

এই যে মেয়ের বাবা শোনেন.!
আপনার মেয়ে রূপে আচরণে আমাদের মন কেড়ে নিয়েছে,অতএব আমরা সোনালী মা কে আমাদের পরিবারে নিয়ে যেতে চাই বউ হিসেবে আপনি কি আমাদের প্রস্তাবে রাজি আছেন—-!!

(“সোনালীর বাবা”)

দেখুন আপনারা যদি পছন্দ করে থাকেন আলহামদুলিল্লাহ্,আমার­ পক্ষে কোন প্রকার দ্বিমত নেই,
তবে আপনাদের ছেলে প্রবাসী,তার পছন্দ অপছন্দের মাঝে সঠিক দিক নির্দেশন করা হবে,আপনারা কি বলেন.!

(“বর পক্ষ”)

তবে ছেলে মেয়ে দুজনে কথা বলুক,দুজনের মনের অভিরুচি প্রকাশ করুক,তাদের জীবন তারা ই জীবন সঙ্গী কে বুঝে জেনে মতামত দিলে বিবাহ হবে।

এবার আসুন
দেখা যাক সোনালী ও তার ভীতু বর কথোপকথন।

দুজন কে পাশের একটি বারান্দায় পাঠালেন,উভয়ের অনুমতি তে পরিবারবর্গ,দুজন একসাথে দাঁড়ানো- ভীতু বর কাঁপে আর সোনালী মৃদুহাসে,কিছু মেয়েরা খুব দোষ্টু হয় ভীতু ছেলে দেখলে হাসে আর হাসে,
কথা হয় না দুজন ই চুপচাপ, এ যেন নীল আকাশে মেঘরাশি গম্ভীরতা অতি বেশি,কিছুক্ষণ পরে হয়তো বৃষ্টিপাত হবে বাহিরে কিংবা দুটি মনের প্রান্তরে।

“বর”
আচ্ছা আপনি কি বিবাহবন্ধনে আমার সাথে আবদ্ধ হতে সহমত আছেন! না ইয়ে মানে যদি কিছু বলতেন কথা চলু হতো দুটি মনের।

“সোনালী”
আসলে সত্য বলতে গ্রামের মেয়েদের মা বাবার উপরে কথা বলার শিক্ষা মা বাবা দেয় নি,হয়তো আমার মা বাবা ও উত্তম শিক্ষা দিয়েছেন যেন উনাদের পছন্দ আমি সৎ জ্ঞানে মেনে নিতে পারি,
এখানে ছোট্ট করে বলি,মেয়েরা সরাসরি সব কথা বলে না,তারা গুছিয়ে বুঝাই,এইভাবে যে হ্যাঁ আমি রাজি বিবাহ করতে,এটা বলতে চাই না।

আর রাজি না হবার কোন ত্রুটি নেই যে,ছেলে শিক্ষিত প্রবাসী ও দেখতে অনেকটা স্মার্ট, আর্মি কাটিং চুল,বেশ লম্বা মনে হয় বসে থেকে ঘরের সিলিং ছুঁইবে,কিছুটা স্বাস্থ্যবান যা প্রবাসী হলে হয়ে থাকে,মেয়েরা অতি চিকন অতি মোটা হাতির পুরুষ পছন্দ করে না,

তার মানে দুজনের একমত, এবার বলবে সবার কানেকানে,মিয়া বিবি রাজী, ডাকা’র বাকি শুধু কাজী।

দুজনে এসে দুজনার মতামত প্রকাশ করার সাথে সাথে বিবাহর দিন তারিখ ধার্য করে ফেলছেন পরিবারবর্গ।

(উভয় পক্ষের আলাপন)

আগামী পবিত্র শুক্রবার বাদ জুম্মা
১৬-০৬-২০১১ ইং বিবাহর দিন ধার্য করা হলো, খুশি খবর মিষ্টি ছাড়া কি চলে-! হয়তো না , সবাই মিষ্টি খেয়ে বেশ খুশি।

লেনাদেনা -!
একদম কিছুনা তবে যার যার ইচ্ছামত খুশি হয়ে দিতে পারবেন কোন বাঁধা নেই।

কত সুন্দর বিবাহ কোন ভিক্ষুক নেই,
লেখক মৃদুহাসে ও সবাই কে মৃদু হাসাতে ইচ্ছুক,
মানে—– যৌতুক নেই-!
আজকাল যৌতুক ছাড়া বিবাহ হয়-!
একদম কম শতকরা ০৫% আশাবাদি।

সবাই যার যার মত বিদায় নিলো,এদিকে সোনালীর বাবা সব আয়োজনে ব্যস্ত,যৌতুক দাবী করেনি বলে কি মেয়েকে খালি হাতে পাঠাবে-!
হয়তো না, বাবা হিসেবে অনেক কিছু দিবেন মনে রেখেছেন,বাবা তো বাবা ই বন্ধুর চেয়ে আপনজন।

এভাবে দিন যায় রাতে আসে
ভালোবাসা সহ থাকে সবাই মিলে মিশে,
দেখতে দেখতে বৃহস্পতিবার চলে আসলো,
আকাশে বাতাসে গায়ে হলুদের সুর ধ্বনি, সবাই খুশি তাই ফোঁটাই আকাশ বাজি,মেহেদী গাছ থেকে মেহেদী পাতা একে একে করে সংরক্ষণ,মাটির কলসে করে পুকুর থেকে পানি আহরণ,কাঁচা হলুদের সুঘ্রাণ অাহা স্বদেশী বিবাহ, রাখে গ্রামের ঐতিহ্য মান,
আজ গায়ে হলুদ সোনালীর,গ্রামের পরিবেশে গায়ে হলুদ শহরের তুলনায় অধিক সুন্দর,
সূর্য ডুবে গেলো পশ্চিম আকাশে, সন্ধ্যা নেমে এলো চারদিকে, হৈচৈ চেঁচামেচি আনন্দে ভরপুর,জেনারেটর সমৃদ্ধ তারাবাতি জ্বলে নিভে,সন্ধ্যার প্রকৃতি আজ ঝিকিমিকি সাজে সজ্জিত,মস্ত-বড় রঙিলা বিবাহর গেট, এ যেন স্বপ্নময় রাজবাড়ি।

গায়ে হলুদের সাজে সোনালী সাজলো,হলুদ বরণ শাড়ি,খোঁপায় গাধাফুল,কানে দিলো দুল,হাতে রাঙা মেহেদী,কপালে স্পর্শকাতর কাঁচা হলুদের ভিতর মনে হয় এ যেন হলুদে রাণী,গায়ে হলুদের সাজে সোনালী বেশ লাগছে রাঙাপরী।

আনন্দ ঘনঘটা মুখরিত বিয়ে বাড়ি,গায়ে হলুদের আনুষ্ঠানিকতা চলে গরু জবাই করার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত,
যার যার কাজে আনন্দ করে করে শেষ রাত্রি হয়ে গেলো ,
সবাই এখন ক্লান্ত, কেউ পড়েছে ঘুমিয়,কেউ জেগে আছে গরু জবাই দেখবে বলে।

কসাই হাজির বাবুর্চি হাজির,
গরু জবাই হবে মাটিতে লাল ইট মোড়ানো চুলা তে রান্নাবান্না বাবুর্চি করে ফেলবেন,

এদিকে
মুয়াজ্জিনে আসসালাতু খায়রুম মিনান্নাও……ঘুম থেকে নামায উত্তম.মসজিদে আযান হয়ে গেলো,ভোরের পাখিরা ডাকাডাকি শুরু করে দিলো,প্রভাতের মিটিমিটি হাওয়া সবার অঙ্গে দোলা দিলো,সূর্যের ভূমিষ্ঠ লাল রূপ অনেকের দৃষ্টিকোণ স্থান পেলো,বিয়ে বাড়ির প্রকৃতি দেখে মনে হলো,স্নিগ্ধকর সকাল বুঝি তাদের জন্য আসলো।

এদিকে দুপুর গড়িল,
টেবিল চেয়ার সাজানো শেষ,বাবুর্চির রান্না শেষ ছুঁই ছুঁই,সবাই আপন মনে নতুন কাপড় পরিধান করে নিলো,মসজিদে জুম্মার নামাযের আযান দিলো,সবাই জুম্মার নামায পড়ে অনেক আমন্ত্রিত মেহমান বিয়ে বাড়ি হাজির হলো,দাওয়াত খাবে বিয়ের দাওয়াত,চিকন চাউলের সুগন্ধি পোলাও দেশী গরুর সুস্বাদু গুস্ত সাথে মুরগীর গুস্ত, ডাল ও দই, লেবু চিপা দিয়ে রস বের করে খাবে, আহ কি স্বাদ
লোভ হয়, বিয়ের খবার সকল মেহমান খাবেন।

সবাই যার যার খাবার খাওয়া নিয়ে ব্যস্ত,অথচ বেচারী সোনালী গত এক সপ্তাহ যাবত খাবার বন্ধ,সবচেয়ে দুঃখের বিষয় হলো মেয়েরা বিয়ে ঠিক হলে খাওয়ার রুচি নষ্ট।

চলবে—–>