আমার কাছে প্রায় দেড় শতাধিক ছড়ার বই আছে।সবগুলোই পড়া। অনার্স ফাইনাল ইয়ারের পরীক্ষা চলছে। আজ থেকে দুই সপ্তাহের ছুটি। ভাবলাম একটা বই পড়ব। কিন্তু বুক শেলফের কাছে গিয়ে মত চেইঞ্জ করে লোকমান আহমেদ আপন সম্পাদিত “ছড়াকর্ম”(২০১৭) নিয়ে বসলাম। এটা আগে অর্ধেক পড়া ছিল।
আজ পড়তে বসে চোখ আটকে গেল “ভালোবাসা” নামক ছড়া নাটকে। লেখক মোসলেহ উদ্দিন বাবুল। তিনি ফেবুর কল্যাণে আমার ফ্রেন্ড হলেও বয়সে প্রায় বাবার কাছাকাছি। যাক, নাটকের কথা বলি। নাটকের চরিত্রে আছে গেরস্ত বউ, স্বামী, কন্যা ও তিন বৃদ্ধ। তিন বুড়োর গায়ে বিভিন্ন রঙের পোশাক। একজন তুষার-শুভ্র, একজন হলদে-সবুজ ও আরেকজন সোনালী-হলুদ। নাটকে দেখা যায় তিন বুড়োর তিন বৈশিষ্ট্য। একজনের “বিশ্বাস”, একজনের “সম্পদ”, এবং অন্যজনের “ভালোবাসা”। নাটকের মূল কাহিনী এরকম- গেরস্ত বউ গোসল করে উঠোনে এলো কাপড় নাড়তে। তখন তিনি হঠাৎ বাড়ির অদূরে দেখলেন তিনজন বুড়ো তিন মাথা হয়ে পাশাপাশি বসে আছেন। গেরস্ত বউ ভাবলেন তারা ক্ষুধার্ত। তাদেরকে খাবারের দাওয়াত দিলেন। কিন্তু তারা তার স্বামীর অনুমতি ছাড়া গৃহে যাবেননা। শেষ বিকেলে স্বামী বাড়িতে এলো। স্বামীর অনুমতি নিয়ে গেরস্ত বউ আবার গেলেন বুড়োদের আনতে। কিন্তু এবার তারা দিল নতুন শর্ত। তিন জন যাবেননা, একজন যাবেন। ছড়াকারের ভাষায়-
“খেতে যাবো, কিন্তু মাগো
একটা আছে শর্ত
রাগ করোনা মা জননী
আমরা সবাই পর তো!
কোথাও গেলে যে কোনোজন
একাই যেতে পারি,
একই সাথে তিনজনা তো
যাওয়া কঠিন ভারি”!
গেরস্ত বউ পড়ে গেলেন দোটানায়। সবাই ক্ষুধার্ত। কাকে রেখে কাকে নেবেন? গেলেন স্বামীর সাথে পরামর্শ করতে। স্বামী বলল, আমরা গরিব মানুষ। যার “সম্পদ” আছে তাকে নিয়ে এসো। কিন্তু বউয়ের মত যার “বিশ্বাস” আছে তাকে নিয়ে আসার জন্য। আর কন্যা “ভালোবাসা”কে নিয়ে আসার কথা বলল। গেরস্ত পরিবার কন্যার কথাকে প্রাধান্য দিল। গেরস্ত বউ বুড়োদের কাছে গিয়ে “ভালোবাসা”কে গৃহে আসার আহবান জানালো। কিন্তু একি! ভালোবাসার পিছু পিছু বাকি দুজনও আসতেছে । সবাইকে আসতে দেখে গেরস্ত কন্যা বলল,”ভালোবাসা দাদুমনি, তোমার তো একাই আসার কথা। সবাই আসছে কেন? এবার থমকে গেলেন তিন বুড়ো। পরক্ষনেই বিশ্বাসী বুড়ো বলে ওঠলো,
“গুনবতী, রূপবতী, কৃষাণের কন্যা
বুদ্ধির মারপ্যাঁচে তুমি আজ ধন্যা”।
এরপর সম্পদশালী বুড়ো বলল,
“ভালোবাসা, বিশ্বাস এক যদি থাকে
সম্পদ সেখানেই, আটকে কে রাখে”!
তারপর ভালোবাসা বুড়ো বলল,
“ভালোবাসা করতে পারে
বিশ্বটাকে জয়
“বিশ্বাস” এবং “ভালোবাসা”
“সম্পদ” কি নয়?
এই ছড়া নাটকে ছড়াকার মোসলেহ্ উদ্দিন বাবুল অত্যন্ত সফলভাবে সুন্দর, স্পষ্ট, চমৎকার ও সাবলীল ভাষায় মানুষের ভালোবাসার মহৎ দিকটা ফুটিয়ে তুলেছেন। তাই এই নাটককে তাঁর অনন্য সৃষ্টি বললে খুব বেশি বলা হয়ে যাবেনা। তবে দুখের বিষয় এই যে, বাজারে তাঁর কোনো ছড়ার বই নেই! আমি সবসময় একজন আশাবাদী মানুষ। আশা করি আমাদের মতো ক্ষুদ্র পাঠকের এই কষ্টটুকু ঘুচানোর দিকে তিনি নজর দিবেন।
লেখক: শিক্ষার্থী, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী।
আপনার মন্তব্য লিখুন