গৃহকর্মীরা যখন গৃহকর্ত্রী হতে চায় শিরোনামের লেখা এবং উইমেন চ্যাপ্টার প্রসঙ্গঃ
লেখাটির শিরোনাম পালটে পরে দেয়া হয়েছে গৃহকর্মী নির্যাতনঃ মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। মুদ্রার ওপিঠ বর্ণনা করতে যেয়ে নানান বিষয় এসেছে। কিভাবে গৃহকর্মীরা কর্ত্রীর অনুপস্থিতিতে ড্রেসিং টেবিল দখলে নেয়, কর্ত্রীর বিলাসবহুল বিছানা থেকে কিভাবে কর্তাঠাকুরকে রান্নাঘরের মেঝেয় বিছানো তেল চিটচিটে বিছানায় নিয়ে আসে(!), কিভাবে তারা কর্ত্রী হয়ে ওঠার বিফল দুঃস্বপ্ন দেখে ইত্যাদি…
এখানে একটা মজার ব্যাপার হল, বার বার বলা হচ্ছে কর্মজীবী নারীর অসহায়ত্বের কথা। খেয়াল করলে বোঝা যাবে, এই কর্মজীবী বলতে মধ্যবিত্ত বা উচ্চ মধ্যবিত্ত বা উচ্চবিত্ত নারীকেই বোঝানো হয়। এই বিশেষ ধরনের “কর্মজীবী নারীর” অসহায়ত্ব তুলে ধরার সময় এই ঘরানার মানুষেরা ভুলেই যান যে নিম্নবিত্ত নারীর কর্মজীবী আর অকর্মজীবী এই দুই আলাদা অপশন নেই ই।
তার কর্ম করেই খাওয়া লাগে এবং এই দেশে যে লাখ লাখ নারী কল কারখানায় কাজ করেন, বাড়িতে বাড়িতে গৃহ শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন তারা কিন্তু সংখ্যায় এই এদের বর্ণিত বিশেষ ধরনের “কর্মজীবী নারীর” থেকে সংখ্যায় অনেক বেশি।
তারা বা তাদের স্বামীরা বাচ্চা পালার জন্যে “বুয়া” রাখার কথা চিন্তাও করতে পারেন না, এমনকি বাচ্চা নিজেদের কাছে রাখতেই পারেন না, গ্রামে পাঠায় দিতে বাধ্য হন। তো অসহায়ত্বের ব্যাপারটা ধরতে পারছেন! অসমাপ্ত অসহায়ত্বের চিত্র যখন তুলে ধরবেন তখন এরকম শ্রেণি ঘৃণা বেফাস বের হয়ে আসতে বাধ্য।
আপনারা শিশু নির্যাতক আর্মি অফিসারের স্ত্রীর পক্ষে লিখছেন তা বলছি না আপাতত, তবে যেই উইমেন চ্যাপ্টারে নারীর যৌন ডিস্ক্রিমিনেশনের সমাধান হিসেবে নারীর জন্যে ব্রোথেলের ব্যাবস্থা করতে হবে বলে লেখা প্রকাশ করেন, যেই লেখা প্রকাশের আগে ভাবনায়ও আসে না ব্রোথেল টিকে আছে কিসের জন্যে, পুরুষের জন্যে কেন হাজার বছর ধরে ব্রোথেল থাকবে, ব্রোথেলে কারা শোষিত হয়…
সেই উইমেন চ্যাপ্টারেই আপনারা লক্ষ্মী কেন দাদার সাথে মেলামেশা করে মায়া বড়ি খেল বা কাজের বুয়া কেন কর্তাকে বিলাস বহুল বিছানা থেকে নামায় আনতে কৌশলী হল, সেটা বলতে পারেন না। আপনারা কর্তাদের যৌনাঙ্গে বর্ম পরায়ে রাখতে পারেন, অথবা এখন দাস যুগ চলছে এই ঘোষনা দিয়ে দিতে পারেন।
কিন্তু প্লিজ, এই শ্রেণি চেতনা নিয়ে, এই কুপমন্ডুকতা নিয়ে, নারী বলতে মধ্যবিত্ত বা উচ্চ বিত্ত নারী – এই বুঝ নিয়ে, নারীর জীবনের সংকট বলতে মধ্যবিত্ত বা উচ্চবিত্ত নারীর সংকটের মধ্যে ঘোরপাক খেয়ে, এবং সর্বোপরি নিজেদের শ্রেণি পরিচয়ের মধ্যে নিজেদের চিন্তা বিবেক হারায়ে নিস্ব এবং ফাঁপা হয়ে এই “নারী মুক্তি”র চেষ্টা করে যেয়েন না। ভালো দেখায় না।
আপনার মন্তব্য লিখুন