ফেসবুক স্ট্যাটাস

কি অদ্ভুদ দেশে বসবাস করতেছি!

 

ছেলে ধরা সন্দেহে দেশের বিভিন্ন জায়গায় গণপিটুনির নামে নিরীহ মানুষকে মেরে ফেলা হচ্ছে। ভাবতেই গায়ে কাটা দিয়ে যাচ্ছে। কাল বাড্ডায় যে নারীটিকে মেরে ফেলা হলো ভাবতে ঘৃণা হচ্ছে যে মানুষগুলো গণপিটুনি দিচ্ছিলো কারো ভিতর মনুষ্যত্ব নামক জিনিসটা দেখতে পেলাম না। মনুষ্যত্ব না হয় বাদই দিলাম! একটা নিরস্ত্র নারীকে কিছু লোক কেমনে এভাবে মারতে পারে!? আরে যুক্তির খাতিরে ধরে নিলাম সে ছেলে ধরা ছিলো। যে মানুষটার প্রথম সন্দেহটা হয়েছিলো সে নিশ্চিতভাবে ধরে নিতেই পারি পুরুষ (সে পুরুষটাকে পুরুষ বলতে ঘৃণা হচ্ছে। পুরুষ নামে কাপুরুষ ছিলো শুধু) ছিলো। সেই পুরুষটার কাছে একটা প্রশ্ন- নারীটার কি মানুষটার এক পেশীর শক্তি হতো? সন্দেহ হয়েছে ভালো কথা মানবিক দিক থেকে হোক বা আরো তথ্যর জন্য হলেও তো নারীটাকে ধরে পুলিশে দিতে পারতেন! এ ছোট্ট চিন্তা শক্তি কি তার ব্রেইনে আসে নি? অবাক লাগে!!!

ভিডিওতে দেখা যাচ্ছিলো সামনের দিকে যে দুইটা অমানুষ নির্মম ভাবে মারতেছিলো সেগুলো তার ছেলের বয়সী হবে। তা না হোক অন্তত এটা সিউর উনার ছোট হবে। অবাক লাগে মানুষের ভিতর মাতৃত্ব, ভ্রাতৃত্ব, মনুষ্যত্ব, বিবেক কিছুই পাওয়া যায় না। আরো অবাক লাগে একটা নারীকে এভাবে মারতেছে আর সবাই দেখে আছে আরো কত সুন্দর করে ভিডিও করতেছে সবাই। সেখানের কোন মানুষকে দেখলাম না মনুষ্যত্ব নিয়ে মহিলাটাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসতে। খবরে দেখলাম মহিলাটার ছোট্ট ফুটফুটে একটা বাচ্চা আছে। মেয়েটা এখনো জানে না অমানুষের হাতে গণপিটুনিতে তার মা আর বেঁচে নেই। কি নিষ্টুর! মনুষ্যত্বহীন এক জাতির সাথে বাস করতেছি!

এর কয়েকদিন আগে শুনলাম গ্রামে বাড়ি বাড়ি গিয়ে নারিকেল গাছ পরিষ্কার করে এমন একটা মানুষকে ছেলে ধরা/কল্লা কাটা সন্দেহে পিটিয়ে মারে! ভাবা যায়???

গতকাল নওগাঁতে ছয়জনকে ছেলেধরা ভেবে গনপিটুনি দিয়ে আহত করে জনগন।

ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলায় ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনিতে গতকাল এক যুবক আহত হয়েছে।

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনিতে অজ্ঞাত এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন গতকাল।

গতকালই নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জেই পঁচিশ বছরের এক যুবককে পিটিয়ে মারে উত্তেজিত জনগন।

কিছুদিন আগে নারায়ণগঞ্জে বাবা তার সন্তানদেরকে নিয়ে রিকশা করে যাচ্ছিল। সন্তানরা দুষ্টামি শুরু করলে ধমক দিলে তারা কান্না শুরু করে। এরপর লোকজন জড়ো হয়ে ছেলেধরা সন্দেহে লোকটিকে পিটিয়ে আহত করে। ভাগ্য ভালো যে তিনি মারা যান নি।

ক্যান ইউ ইমাজিন? এ অল্প কয়েক দিনে কতজন নিরীহ মানুষকে মেরে ফেলা হয়েছে একটা গুজবের কারনে!!!

চোখ বন্ধ করে ভাবুন! নিজের ছেলে মেয়ে নিয়ে বাসার বাইরে গেলেন ওরা দুষ্টামি করতেছে, দৌড়াদৌড়ি করতেছে এদিক সেদিক আপনার সন্তান হয়তো দুষ্টামির কারনে আঘাত পেতে পারে। কিন্তু আপনার ডাক দেয়া যাবে না! ছেলে মেয়ে কান্না করলেই হতে পারে গণপিটুনি!!! ভাবেন কোন জাতির সাথে বসবাস করতেছেন!

আমার তো ভয়ের কারন হয় প্রতি মুহুর্তে মাঝে মাঝে নিজের ছোট ছোট ভাই বোনগুলোকে স্কুলে দিয়ে আসতে হয়। এগুলো যে পরিমান দুষ্টামি করে ডাক দিলে কখন না জানি আমাকেই ছেলে ধরা বলে গনপিটুনি দেয়!!!! কান্না করলে আগে আসে পাশে তাকায় কেউ কোন দৌড়ে আসতেছে নাকি মারার জন্য! বাস্তবে ছেলেধরা বলতে কিছু নেই আমাদের দেশে। তবে হ্যাঁ, অপহরণকারী, মানবপাচারাকারী আছে। তাদের কাজের ধরন, লুক, গতি কি আসলেই এরকম? মনে হয় না এদের কাউকে সহজে ধরা যায়। গণপিটুনি দেয়া যায়। তারা দ্রুত গতির, কাজ হোক বা না হোক পালিয়ে যেতে চায়। এটা সিউর এরা নিরস্ত্র হয় না।

লোকজন ছেলেধরা নিয়ে উম্মাদনা করতে থাকলে অপহরণকারীরা এই সুযোগকে কাজে লাগাবে। তারা অপহরণ করে, পাচার করে সেটা ছেলেধরার ঘটনায় আড়াল করে দিবে।

গুজব যেভাবে মহামারী আকারে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে… না জানি আরো কত এরকম খবর শুনতে হবে। ভাই, প্লিজ এবার অন্তত থামুন। নিজের বিবেককে কাজে লাগিয়ে চলুন, নির্বোধ আর কত!!! গণপিটুনিতে সবাই যেভাবে পেশী শক্তি দেখায় সে এলাকাগুলোতে নিষ্টুরভাবে কুপিয়ে হত্যার ঘটনাও আছে।

বিশ্বজিৎ হত্যা, বদরুলের সেই ঘটনা, সম্প্রতি রিফাত হত্যা! এরকম আরো কত হত্যাযজ্ঞ! কই? আসেপাশে এতো মানুষ ছিলো কাউকে দেখলাম না তো এগিয়ে এসে এদেরকে গণপিটুনি দিতে!!!

বাস্তব হলেও সত্য কি জানেন? আমরা শক্তের ভক্ত, নরমের যম।

Niaz Morshed Saimon