ফাগুনের দিন কবেই তো শেষ,
ছিলো না-কি তব ফিরিবার দেশ?
চৈতালি মম পল্লী-বক্ষ মাঝে
ফুটিয়াছে গো সে নব নব সাজে।
সে কি নহে তব আপনার জন—
চেয়ে চেয়ে থাকা সেই অনুক্ষণ?
যেথায় ফুটিতো রে পূষা রাঙা-লাল কায়
ফাগুনের দিনে’কুহু’কোকিল গায়—
আড়ালে থাকিয়া তরু-শাখা-তলে;
সে সকল তুমি কেমনে গো বিসরিলে?
গুল-বাগিচার গুলগুলি হায় নাহি গো মদীয় গাঁয়
মাচানের ’পরে কত কুমড়ো-কুসুম পবনেতে দোলা খায়।
আম্র-কাননে মুকুল-মঞ্জুরী ফোটে গো জৈষ্ঠের তরে
কাঁঠাল-বৃক্ষের মঞ্জুল ফল তা ও তো সে মতে ধরে।
সেথা শুনিবারে পাই পাপিয়ার ডাক মুক্ত-শীরীন গান
মাঝ-দুপুরে ঘুঘু ডাকিয়া জুড়ায় গাঁয়ের প্রাণ।
সেথা রাখালের বাঁশী বটের ছায়ায় রভসে ভরায় মন
মেঠো পথ দিয়ে শিঞ্জিনী পায়ে কুমারী চলে গো যখন।
তোমার রয়েছে রাজপথ পাশে যতো মহাঘর অনড়
আমার রয়েছে মেঠোপথ পাড়ে কুটির সে পড়-পড়।
সেথা পুকুরের পাড়ে বকুল শাখায় ফুটে রয় কত ফুল
আঁচল পাতিয়া কুড়ায় কুমারী ছড়ায়ে দীঘল-চুল।
আঁচল ভরিয়া আনিয়া সে ফুল ঢালিয়া মাধুরী কত
সুরের লহরী কণ্ঠে ছড়ায়ে গাঁথে যে মালিকা শত।
প্রিয় সে জনের গলায় পরাতে রাত্রি জাগিয়া গাঁথে
পরাতে নারিলে সে মালা তারে, বুকে যে বেদন ব্যথে।
আষাঢ়ের কালে নীপবৃক্ষের ডালে,ঝরায়ে মনের কথা
কত নীপ-মেয়ে যৌবন পেয়ে জানায় সখীরে ব্যথা।
তবু হাসিয়া হাসিয়া প্রেমালাপ করে সব সখীতে মিলি’
ভোরের হাওয়াতে দেখি রে তলাতে কাঁদে সে রূপেরে ফেলি’।
ভগ্ন সে দেহরে তুলিয়া লইতে পল্লী-বালিকা এসে
কচি হাতে তারে টানিয়া ক্রোড়ে ফিরিছে গৃহের দেশে।
গৃহতে ফিরিয়া গৃহের দুয়ারে বসিয়া ছড়ায়ে পা
কদম-কন্যার বক্ষ চিরিয়া গাঁথে নব মালিকা।
এক পাপড়ির বুকের ভেতরে আরেক পাপড়ি জুড়ি’
এমনি করিয়া মিলায়ে মিলায়ে রচে যে মালিকা তারি।
সে মালাখানিরে গলায় পরিয়া ছোট ভাইটিরে ডাকে, ‘আয়’,
আসিলে কাছেতে ভাইটি তাহার,দু’গালেতে চুমু খায়।
কদম-কন্যার কঠিন বক্ষ তুলে দিয়ে হাতে তারি
বলে,’লক্ষ্মীটি আমার,খেলা কর গিয়ে আপন মনেতে ফিরি’।
দিদির নিকটে যে নজরানা পেয়ে খুশীতে দোলায় মাথা
হায়,জানে কি-না, সে যে নীপ-কিশোরীর জমানো বুকের ব্যথা!
যাত্রাবাড়ী,ঢাকা
আপনার মন্তব্য লিখুন