২১-শে ফেব্রুয়ারি মহান শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। এই দিনটি সমগ্র বাঙালি জাতির মুখের ভাষা, মায়ের ভাষা, বাংলা ভাষা’র ইতিহাস প্রতিষ্ঠা পায়। ভাইয়ের বুকের তরতাজা রক্তের বিনিময়ে আসে সফলতা। বিশ্বে আর কোথাও কখন ও এরকম ঘটনা ঘটেনি। পাকিস্তানের চাপানো উর্দু ভাষা বাঙালিরা সেদিন মেনে না নিয়ে এই ভূখন্ডের ভাষা, বাংলা ভাষা’ মমতাময়ী মায়ের মুখের ভাষা, বাংলা ভাষার স্বাধীনতা আদায়ে ঢাকার রাজপথে “ রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চাই” মিছিলে সরব থাকেন।কিন্তু সেই উত্তাল স্লোগানে পাকিস্তানি পুলিশ বাহিনী গুলি চালালে – সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারসহ দামাল ছেলের রক্তে রক্তাক্ত হয় রাজপথ। ক্ষতাক্ত করে সমগ্র বাঙালির বুক। ব্যথা কাতর হৃদয়ে শহীদ হওয়া ভাইদের নিয়ে ছন্দ ছড়ায় জীবন পরিচয় দেয়া যায় এভাবে-
১।
মিষ্টি ছেলে রফিক উদ্দিন
মানিকগঞ্জের তাজ,
বাদামতলির বাবার ব্যবসায়
করতে আসে কাজ।
ফেব্রুয়ারি মাসে;
রাষ্ট্র ভাষা ‘বাংলা চাই’
চোখে মুখে ভাসে।
মায়ের ভাষা বাংলা ভাষা
শ্রমিক কুলি হোক্ না চাষা
কে না ভালোবাসে?
ভাষার দাবীর মিছিলেতে
কাজ ফেলে সে আসে।
পুলিশের গুলি, মাথায় লেগে
মৃত্যু হলো তাঁর,
বাংলা ভাষা দিয়ে যেতে
হয়নি কোন হার!
মায়ের ছেলে গাঁয়ের ছেলে
রতœ অলংকার,
ভাষার জন্য জীবন দেওয়া
স্বপ্ন অহংকার।
(২)
ময়মনসিংহ গফরগাঁও এর
বিদেশ ফেরত একটি ছেলে,
শাশুড়িকে দেখতে ঢাকায়
ছুটে আসে ডানা মেলে।
বঙ্গ দেশের সব বাঙালি,
বাংলা ভাষার প্রাণ কাঙালী।
ভাষার জন্য হচ্ছে মিছিল
প্রাণটি কাঁদে তাঁর,
স্বদিচ্ছাতেই যোগ দিয়েছে
শোনে কথা কার?
তাঁর শরীরে লাগল গুলি,
এসব কথা কেমনে ভুলি!
হাসপাতালে নেওয়া হলো,
চিকিৎসাও দেওয়া হলো।
মৃত্যু কোলে ঢলে পড়ল,
বাংলা বাংলা বলে পড়ল।
মা’ মুখে ডাক ছিল,
প্ল্যাকার্ড হাতে রাখছিল।
ভাষার জন্য জীবন দেওয়া-
রক্তে ভেজা কাফন নেওয়া-
ভাষা শহীদ এই ছেলেটি
আবদুল জব্বার ছিল,
বঙ্গ মায়ের ঘরে আলো
জ্বেলে জীবন দিল।
(৩)
ঢাকার ছাত্র শ্রদ্ধার পাত্র
আবুল বরকত নাম,
জীবন সপে দিয়ে গেল
মাতৃভাষার দাম।
বাংলা মায়ের ভালবেসে-
ভাষার জন্য ছুটে এসে-
মিছিলে যোগ দিল,
এক গুলিতে বুকের মাঝের
প্রাণটি কেড়ে নিল।
(৪)
ভাষা শহীদ আব্দুস সালাম
ফেনি জেলায় বাড়ি,
চাকরীর জন্য ঢাকায় থাকে
নিজের জেলা ছাড়ি।
ভাষার টানে যায় মিছিলে
একুশ ফেব্রুয়ারি,
তাঁর শরীরে লাগল গুলি
করুণ আহাজারি!
দেড় মাসেরও বেশী সময়
চিকিৎসাধীন ছিল,
রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চেয়ে
বলী জীবন দিল।
সালাম বরকত রফিক জব্বার
অমর হলো নাম,
ভাষার জন্য জীবন দিয়ে
বিশ্বে পেল দাম।
বঙ্গ মায়ের সোনার ছেলে
রাখল বাংলার মান,
তাইতো তাদের স্মরণে গায়
ফেব্রুয়ারির গান।
ফেব্রুয়ারির গান।।
( আমার ভায়ের রক্তে রাঙানো
একুশে ফেব্রুয়ারি,
আমি কি ভুলিতে পারি!!
১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারি ভাষার জন্য জীবন দেওয়া শহীদ ভাইদের স্মরণে
স্মৃতিচারণ করি। শহীদ মিনার ফুলে ফুলে সজ্জিত হয়, প্লাকার্ড হাতে রাজপথে ভাষার দাবীর মিছিলে শহীদ রক্তে রাঙানো বুকে, মুখে মায়ের বাংলা ভাষা আদায়ে সকলের প্রতি—স্মরণে আজ আমরা গাই একুশের গান।
মা মাটির এই বঙ্গ দেশে
প্রাণ খুলে হাসতে পারি,
মায়ের ভাষায় কথা বলে
সবার ভালো বাসতে পারি।
মেঠো পথে চাইতে চাইতে
সবুজ মাঠে যাইতে পারি,
মাতৃভাষা বাংলা ভাষায়
আনন্দে গান গাইতে পারি।
মায়া মাখা নিবিড় ছায়ায়
মা’ বলে, ডাকতে পারি;
শ্যামল শোভার সবুজ হাসির
রূপের ছবি আঁকতে পারি।
অ আ ক খ বর্ণ গুলো
বাংলা ভাষা মায়ের ভাষা,
কৃষক-শ্রমিক এই বাঙালির
মুখের ভাষা সুখের ভাষা-
হাসির ভাষা দুখের ভাষা-
বঙ্গ দেশের গাঁয়ের ভাষা।
মাগো আমি এসেছি তোমার কথায় তোমাকে মা’ বলে ডাকতে তুমি আদর করে খোকা বলে আমায় ডাকো। খোকা! এসেছিস? হ্যাঁ মা— আমার ভাষা বাংলা ভাষার প্ল্যাকার্ড হাতে রাজপথ ঘুরে ভাষার মিছিলে গুলিবিদ্ধ রক্তে রঞ্জিত বুকে দাবী আদায় করে ফিরে এসেছি—-তোমায় মা’ বলে ডাকতে। তাই বলতে ইচ্ছে করে–
বাংলা ভাষা মায়ের ভাষা
শহর বন্দর গাঁয়ের ভাষা
সুখের ভাষা দুখের ভাষা
মা’ জননীর মুখের ভাষা।
নতুন কথার আলো আসা
বঙ্গ ঘরের ভালবাসা।
এই ভাষারই জন্য শহীদ
হয়েছিল ভাই;
ফেব্রুয়ারির একুশ তারিখ
ভাষার মিছিল গিয়ে-
সালাম বরকত রফিক জব্বার
বুকের রক্ত দিয়ে-
স্বপ্ন চোখের জলে মুক্ত
বাংলা ভাষা পাই।
তাইতো এখন স্বাধীনভাবে
বাংলা ভাষা বলতে পারি!
দূর-দিগন্তে মনের মতন
মিষ্টি হেসে চলতে পারি!
ফেব্রুয়ারি এলে ফিরে পায় মা ও সন্তানের মমতাবোধ জেগে উঠি নব উদ্যমে। মায়ের মুখের মিষ্টি শব্দের চাদর মোড়ানো আদর অনুভূতি স্মৃতিফ্রেম ফিরে পায়। ফিরে পায় মায়ের মুখের, সুখের বাংলা কথার জন্য জীবন দেওয়া হারনো ভাই। স্বাধীন বাতাসের গন্ধে, ছন্দের আবরণে ফুলে ছাওয়া শহীদ মিনার।
শ্যামল মায়ার ছায়া ঘেরা
সবুজ বনের মাঠে
শহর বন্দর ঘাটে
বাংলা ভাষায় কথা বলে
আনন্দে দিন কাটে।
চির-সবুজ এই বাংলার
মা জননীর মুখের ভাষা
বাঙালিদের প্রাণের আশা
স্বপ্ন চোখের সুখের ছোঁয়ায়
বুকের মাঝের ভালবাসা
বাংলা ভাষা বাংলা ভাষা।
বাংলা মায়ের ভাষার জন্য
জীবন দিয়ে হলো ধন্য।
সালাম বরকত রফিক জব্বার
তাদের কি আর ভুলতে পারি?
আমি বাঙালি। আমি বাংলায় কথা বলি। এ ভাষায় কথা বলতে শিখিয়েছে, অ আ ক খ বর্ণমালা চিনিয়েছে আমার মা। যখন শুনি ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি এই বাংলা ভাষার জন্য রাজপথে মিছিল হয়েছে, শহীদ হয়েছে আমার ভাই। সন্তান হারিয়েছে আমার মা। তখন চোখের বাঁধভাঙা অশ্রু গড়িয়ে পড়ে দু’গালে। তাই হৃদচিত্তে স্মরণে বলি–
যে ভাষাতে কথা বলে
অন্তরে সুখ পাই,
বঙ্গ মায়ের সে ভাষাকে
বিশ্ব দিল ঠাঁই।
মায়ের মুখে হাসি ঝরা
স্বপ্ন দু’চোখ চাই,
এই জগতে মায়ের মত
আর তো কেহ নাই।
সেই মায়েরই ভাষার জন্য
জীবন দিল ভাই,
ফেব্রুয়ারির স্মরণ দিনে
ভাষার-ই গান গায়।
রক্তে ভেজা সবুজ বনে
শীতল ছোঁয়া পায়,
শহীদ মিনায় দলে দলে
পুষ্প দিতে যায়।
শোকে কাতর শোকে পাথর
ছেলে হারা মা’য়,
ঊর্ধ্ব গগন চেয়ে আজো
বলে খোকা আয়।
চোখের লোনাজলে শিশিরস্নাত নতুন সকালের উদিত ‘বাংলা ভাষা’ আদায়ের এদিনে ফুলে ফুলে ভরে ওঠে শহীদ মিনার। বিশ্বব্যপি পালিত হয় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। অমর একুশে ফেব্রুয়ারি জাগ্রত করুক সকল মানুষের হৃদয়–এই প্রত্যাশায়।
আপনার মন্তব্য লিখুন