সাবুজ খন্দকারঃ
প্রযুক্তির উন্নতি হচ্ছে। ক্রমেই পাল্টে যাচ্ছে নানা কিছুর সংজ্ঞা। এই যেমন ধরুন-লাইব্রেরি অব কংগ্রেস। বিখ্যাত লাইব্রেরি। আছে অবকাঠামোও। কিন্তু আপনি একটি ওয়েব পোর্টালের মাধ্যমেই আবার গড়ে নিতে পারেন বড় ধরনের লাইব্রেরি।
এই ব্যাপারটি ঘটে গেছে চলচ্চিত্রেও। বড় বড় আর্কাইভে নিজ দেশের ধ্রুপদি চলচ্চিত্রগুলো রাখতেন সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু এখন ইচ্ছা করলেই ক্লিকে আপনি দেখে ফেলতে পারেন আন্দ্রেই তারকোভস্কি কিংবা ইংমার বারিমনের সিনেমা।
এতে যে শুধু মাধ্যম পাল্টে গেছে, এমনটি নয়, সুবিধা ও অসুবিধাও বেড়েছে। আগে কোনো দেশের একটি চলচ্চিত্র দেখতে হলে, ওই দেশের দূতাবাসের সাথে যোগাযোগ করে সিনেমাটি আনিয়ে দেখতে হতো। এটা ছিল একটা বড় ধরনের ঝামেলা। সবার পক্ষে দূতাবাস পর্যন্ত যাওয়াটাও ছিল একটা কঠিন ব্যাপার। এই কাজটি মূলত করে সাহায্য করত চলচ্চিত্র সোসাইটিগুলো। এখন অনলাইনের ফলে যে কেউই দেখতে পারছেন সিনেমাগুলো। তবে অনলাইনে সব সিনেমা পাওয়া ভার। আর বেশিরভাগ সিনেমাই অনেকে অনুমোদনহীনভাবে দিয়ে রেখেছেন।
তবে কিছুদিন ধরেই খবরের শিরোনাম- অফিসিয়াললি চলচ্চিত্রের মহারথীদের সিনেমা অনলাইনে দেখার সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে। এই তালিকায় নাম আছে রাশিয়ার পণ্ডিত চলচ্চিত্রকার আন্দ্রেই তারকোভস্কির নাম। শোনা গেছে ফিল্ম থেকে ডিজিটাল মাধ্যমে রূপান্তর করা হচ্ছে হংকংয়ের চলচ্চিত্রকার ওংকার ওয়াই এর সিনেমা। এদিকে মাত্রই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আবারও নিজেদের সিনেমার শক্তিমত্তা জানান দিল দক্ষিণ কোরিয়া। প্যারাসাইট সিনেমা কান চলচ্চিত্রের এবারের আসরে পাম দর জিতল। ঠিক এরপরই সংবাদপত্রগুলো খবর করল দারুণ একটি বিষয়ের। কোরিয়ান ফিল্ম আর্কাইভ তাদের ধ্রুপদি চলচ্চিত্রকারদের ২০০ সিনেমা প্রকাশ করেছে আর্কাইভটির চ্যানেলে। এখন থেকে যে কেউ ইউটিউবের ঐ চ্যানেলে ঢুকে দেখে নিতে পারবেন দক্ষিণ কোরিয়ার সেরা সিনেমাগুলো।
মসফিল্মের ইউটিউব চ্যানেলে তারকোভস্কির সিনেমা
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে সোভিয়েত ইউনিয়নের সেরা পরিচালকদের একজন আন্দ্রেই তারকোভস্কি। শুধু সোভিয়েত রাশিয়া নয়, তার চলচ্চিত্রের মুগ্ধতা ছড়িয়ে যায় বিশ্বজুড়ে। পৃথিবীর নাম করা অনেক চলচ্চিত্রকার তাঁর সিনেমা নিয়ে প্রশংসা করেছেন। ইংমার বারিমন বলেছেন, তারকোভস্কি আমার কাছে পৃথিবীর সেরা একজন পরিচালক। তিনি একজনই যিনি চলচ্চিত্রে নতুন ভাষা সৃষ্টি করেছেন। তাঁর চলচ্চিত্রে জীবনের প্রতিচ্ছবি, জীবনকে স্বপ্ন হিসেবে তুলে ধরেছেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে সোভিয়েত ইউনিয়নের সেরা পরিচালকদের একজন আন্দ্রেই তারকোভস্কি। শুধু সোভিয়েত রাশিয়া নয়, তার চলচ্চিত্রের মুগ্ধতা ছড়িয়ে যায় বিশ্বজুড়ে। পৃথিবীর নাম করা অনেক চলচ্চিত্রকার তাঁর সিনেমা নিয়ে প্রশংসা করেছেন। ইংমার বারিমন বলেছেন, তারকোভস্কি আমার কাছে পৃথিবীর সেরা একজন পরিচালক। তিনি একজনই যিনি চলচ্চিত্রে নতুন ভাষা সৃষ্টি করেছেন। তাঁর চলচ্চিত্রে জীবনের প্রতিচ্ছবি, জীবনকে স্বপ্ন হিসেবে তুলে ধরেছেন।
জাপানি পণ্ডিত পরিচালক আকিরা কুরোসাওয়া বলেছেন, আমি তারকোভস্কির সব সিনেমা পছন্দ করি। আমি তাঁর ব্যক্তিত্ব ও কাজ ভালোবসি। তার সিনেমার প্রত্যেকটা কাটই একটা অসাধারণ ইমেজ হিসেবে দাঁড়িয়ে যায়।
১৯৬২ থেকে ১৯৮৬ সালের মধ্যে তারকোভস্কির সাতটি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রে অধিবিদ্য ও আধ্যাত্মিক সব বিষয় উঠে এসেছে। লম্বা টেক, ধীর গতি ও মেটাফোরিক ইমেজ তারকোভস্কিকে নিজস্ব পরিচিতি এনে দিয়েছে। তারকোভস্কির সিনেমাগুলো এখন দেখা যাবে খুব সহজেই। অনলাইনে ইউটিউবে এগুলো পাওয়া যাচ্ছে। ইউটিউবের ভেরিভাইড চ্যানেল রাশিয়ার মসফিল্ম প্রকাশ করছে সাতটি সিনেমাই। যে কেউ দেখে নিতে পারেন মসফিল্মের ইউটিউব চ্যানেলে গিয়ে। মসফিল্ম রাশিয়ার সবচেয়ে বড় ও ঐতিহ্যবাহী ফিল্ম স্টুডিও।
ওংকার ওয়াইর সিনেমার ডিজিটালে রূপান্তর
এখনো এসব মাস্টার মশাইদের সিনেমা নিয়ে দৌড়ঝাপ দেখলে চোখে সর্ষে ফোটে। বয়স কারো ষাটের গোড়ায়, কেউ পেরিয়েছেন, কেউ বা থুরে থুরে হওয়ার কাছাকাছি। তবু ক্যামেরা নিয়ে দৌড় ঝাপ আছেই। এই যে দেখুন না, ফ্রান্সিস ফোর্ড কপোলা, বয়স আশি। এখনো নাকি সিনেমা বানানোর পরিকল্পনা করছেন। জ্যঁ লুক গোদা। বয়স নব্বই ছুঁই ছুঁই। তবু ফরাসি এই পরিচালকের ক্লান্তি নাই। গত বছর কানে নিয়ে এলেন নিজের বানানো সিনেমা দ্য ইমেজ বুক। এমনই একজন হংকংয়ের পরিচালক ওংকার ওয়াই। বয়ষ ষাট। হাত দিয়েছেন নতুন ছবি বানানোর। নাম-ব্লোজমস।
এখনো এসব মাস্টার মশাইদের সিনেমা নিয়ে দৌড়ঝাপ দেখলে চোখে সর্ষে ফোটে। বয়স কারো ষাটের গোড়ায়, কেউ পেরিয়েছেন, কেউ বা থুরে থুরে হওয়ার কাছাকাছি। তবু ক্যামেরা নিয়ে দৌড় ঝাপ আছেই। এই যে দেখুন না, ফ্রান্সিস ফোর্ড কপোলা, বয়স আশি। এখনো নাকি সিনেমা বানানোর পরিকল্পনা করছেন। জ্যঁ লুক গোদা। বয়স নব্বই ছুঁই ছুঁই। তবু ফরাসি এই পরিচালকের ক্লান্তি নাই। গত বছর কানে নিয়ে এলেন নিজের বানানো সিনেমা দ্য ইমেজ বুক। এমনই একজন হংকংয়ের পরিচালক ওংকার ওয়াই। বয়ষ ষাট। হাত দিয়েছেন নতুন ছবি বানানোর। নাম-ব্লোজমস।
এই চলচ্চিত্রকার এরই মধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন, তাঁর ছবিগুলো ডিজিটালে রূপান্তর করা হচ্ছে। তার মানে খুব সহজেই তাঁর সিনেমাগুলো দেখার সুযোগ হচ্ছে। আর রেজ্যুলেশনও করা হবে ফোর কে। সিনেমার আসল স্বাদ পেতে আর অপেক্ষা নয়।
তবে এটা করার পেছনে একটি উপলক্ষ আছে। বিশ্ব চলচ্চিত্রের যারা খোঁজ রাখেন, তারা জানেন, ওংকার ওয়াই পরিচিত তাঁর বিখ্যাত চলচ্চিত্র ইন দ্য মুড ফর লাভ দিয়ে। সিনেমাটির ২০তম বার্ষিকীতে ২০২০ সালে ওংকার ওয়াই এর সিনেমাগুলোর বিশ্বভ্রমণ (ওয়ার্ল্ড ট্যুর) শুরু হবে।
ওংকার ওয়াই বলেন, আমরা দীর্ঘ সময়ের জন্য রূপান্তরের কাজটি করছি। কয়েক বছর আগে আমি মনিটরে আমার সিনেমাগুলো দেখি। দেখে মনে হলো, সিনেমাগুলো এত বাজে লাগছে কেন? তো আমাকে বলা হলো, এখন ফোর কে প্রজেকশনে সিনেমা দেখানো হয়। আমি তখন এগুলো ফোর কে তে রূপান্তর করার জন্য উদ্যোগ নেই। এবং গত বছর আমি পাঁচ হাজার দর্শকের সামনে ফোর কে তে রূপান্তর করা একটি সিনেমা দেখাই। তাঁরা খুবই প্রশংসা করেছে।
যদিও এখনো অনলাইনে অর্থের বিনিময়ে হোক কিংবা ফ্রি কোনোভাবে এই সিনেমাগুলো দেখা যাবে কিনা এমন ঘোষণা আসেনি।
কোরিয়ার ২০০ ধ্রুপদি সিনেমা ইউটিউবে
এদিকে দক্ষিণ কোরিয়ার ফিল্ম আর্কাইভ দূর্দান্ত একটি কাজ করেছে। তাদের আর্কাইভে থাকা ২০০ সিনেমা উন্মুক্ত করে দিয়েছে ইউটিউবে। এখন যে কেউ কোরিয়ান ফিল্ম আর্কাইভের অফিশিয়াল ইউটিউব চ্যানেল থেকে কোরিয়ার ধ্রুপদি এসব সিনেমা দেখতে পারবেন অনায়াসে।
এবার কান চলচ্চিত্র আসরে কোরিয়ান সিনেমা প্যারাসাইট এর অসাধারণ সাফল্যের পর এটি কোরিয়ান সিনেমার আরেকটি সফলতা। বিশ্ব দরবারে প্রসারিত হলো কোরিয়ান সিনেমার পরিচিতি। চ্যানেলটিতে যেমন ১৯৬০ সালের সিনেমা এইমলেস বুলেট আছে, তেমনি ১৯৯৬ সালের সিনেমা দ্য ডে আ পিগ ফেল ইনটু দ্য ওয়েল ও আছে। যারা কোরিয়ান এই ধ্রুপদি সিনেমা দেখতে আগ্রহী। তাঁরা কোরিয়ান ক্ল্যাসিক ফিল্ম চ্যানেলে গিয়ে দেখে আসতে পারেন।
সূত্র: ওপেন কালচার, ইন্ডিওয়্যার
আপনার মন্তব্য লিখুন